ইসরায়েলের ওপর হামাসের অতর্কিত হামলার পর অবরুদ্ধ গাজাকে ‘মরুভূমি দ্বীপে’ পরিণত করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
শনিবার গাজা শাসনকারী সংগঠন হামাসের আকস্মিক হামলায় অন্তত ৩০০ ইসরায়েলি নিহত হন। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই ইসরায়েলের ওপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ। এই আক্রমণের কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে গাজায় বড় ধরনের স্থল আক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে।
এক টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা এই কালো দিনের জন্য শক্তিশালী প্রতিশোধ নেব। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের হয়ে আমরা প্রতিশোধ নেব। আমরা হামাসের সব অবস্থানকে টার্গেট করছি। গাজাকে আমরা মরুভূমির দ্বীপে পরিণত করব।’
হামাসের হামলায় প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও পাল্টা হামলা চালিয়েছে গাজায়। এতে অবরুদ্ধ গাজায় অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলি বাহিনী এখনও গাজায় বোমাবর্ষণ করে চলেছে। রোববার (৮ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত দক্ষিণ ইসরায়েলের কিছু অংশে হামাসের বন্দুকধারীদের সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে হামাস বলছে, আল আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন ও বিগত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার জবাব হিসাবে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে তারা এই নজিরবিহীন আক্রমণ চালিয়েছে। হামাসের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ বলেন, সময় এসেছে শত্রুদের বোঝার… যে তারা পরিণতি ভোগ করা ছাড়াই পার পাবে না।
৫০ বছর আগে, ১৯৭৩ সালে ইয়োম কিপপুর যুদ্ধের পর এই প্রথম ইসরায়েলের ওপর এত বড় হামলা চালালো ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের বন্দুকধারীরা। শনিবারের আক্রমণে ইসরায়েলি শহরগুলোতে চলেছে ব্যাপক তাণ্ডব।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইসরায়েলের অন্তত ২২টি শহর ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে হামাস। হামাস নেতারা জানিয়েছেন, গাজায় শুরু হওয়া এই হামলা অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়বে।
হামাসের আক্রমণের পর যুদ্ধ অবস্থা ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে অবরুদ্ধ গাজায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি– যারা ইসরায়েলের স্থল, আকাশ ও সমুদ্র অবরোধ সীমার মধ্যে রয়েছেন– তাদেরকে তিনি অবিলম্বে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন।
টেলিভিশন ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, গাজার নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলছি। আপনাদের এখনই চলে যেতে হবে। কারণ আমরা উপত্যকার (গাজা) প্রতিটি কোণায় অভিযান চালাবো।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহলকে ‘মরুভূমি দ্বীপে’ পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে গাজায় একটি বিশাল স্থল আক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে।
নেতানিয়াহু টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘আমরা এই কালো দিনের জন্য শক্তিশালী প্রতিশোধ নেব। আমরা প্রাণ হারানো সমস্ত যুবকের হয়ে প্রতিশোধ নেব। আমরা হামাসের সমস্ত অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু করব। আমরা গাজাকে নির্জন দ্বীপে পরিণত করব। গাজার নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলছি, তোমাদের এখনই চলে যেতে হবে। আমরা গাজার প্রতিটি কোণকে লক্ষ্যবস্তু করব।’
এদিকে গাজার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ইসরায়েল। এর ফলে সেখানকার বাসিন্দারা অন্ধকার এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রাত কাটিয়েছে। গাজার একটি ১৪ তলা টাওয়ার রকেট হামলা চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে হামাসের অফিস ছিল।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চিফ সালেহ আল-আরোরি বলেছেন যে, সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলিকে বন্দী করেছে হামাস। তিনি বলেন, হামাসের কাছে পর্যাপ্ত বন্দী রয়েছে, যাদের মাধ্যমে ইসরায়েলে জেলে থাকা সমস্ত ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করা সম্ভব।