সুনামগঞ্জের ছাতকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশু ইভা আক্তারের দেহ থেকে পৃথক করা মাথা উদ্ধারের পর খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তারই আপন বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার নিজ গ্রাম থেকে ইভার বড় ভাই রবিউলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ।
এর আগে বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে ছাতকের দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের সড়কের পাশের একটি ধান খেত থেকে ওই শিশুর মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক ও ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশি তৎপরতায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) হত্যা মামলার মূল আসামি ছাতকের দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে ও শিশু ইভার বড় ভাই রবিউল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের আতাউর রহমানের ধান ক্ষেতে মাথাবিহীন অবস্থায় ইভা বেগম (১০) নামে এক শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনার শিশুটির পিতা মো. মশাহিদ আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শিশুটির ভাই রবিউল হাসানের কথা বার্তায় সন্দেহজনক মনে হলে তাকে নিবিড়ভাবে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় সে তার বোন ইভাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতার আসামি রবিউল হাসানসহ দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের লিকসন, আক্কল মিয়া, হোসেন একই গ্রামে একটি হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন হাজতবাস করেন। জামিনে মুক্ত হয়ে রবিউল হাসান, লিকসন, আক্কলসহ একই গ্রামের আহমেদ আলী (৩৮), মুজিব (৪২) ও লিটন মিলে মামলাটি সহজে আপস মীমাংসা করার জন্য আরেকটি খুন করে পূর্বের হত্যা মামলার বাদী পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৪ অক্টোবর রবিউল হাসান তার ছোট বোন ইভাকে মোবাইলের মিনিট কার্ড আনার জন্য গ্রামের একটি দোকানে পাঠায়। মিনিট কার্ড কিনে দোকান থেকে বাড়ি আসার পথে আসামিরা শিশু ইভাকে আক্কলের বাড়িতে নিয়ে যায়। আসামিরা শিশু ইভার মুখ, মাথা ও পা চেপে ধরে একটি রামদা দিয়ে ঘাড়ে কোপ মেরে মাথা দেহ থেকে আলাদা করে ফেলে। পরবর্তীতে আসামিরা ছুরি দিয়ে শিশু ইভার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে জখম করে। আসামিরা শিশু ইভার দেহ আতাউর রহমানের ধান ক্ষেতে এবং মাথা লিটনদের জমিতে ফেলে রেখে যায়।
আসামি রবিউল হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শিশু ইভার মাথা লিটনদের জমি থেকে উদ্ধার করা হয়। শিশু ইভা বেগমকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামি রবিউল হাসান বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দিয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।