বৈষম্য নিরসনসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট। এ লক্ষ্যে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়ছে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জসিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে সরকারি কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন, বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বার্ষিক ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা পায়। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসিক ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পায়, যা অমানবিক।
এ সময় উৎসব ভাতা ও বাড়িভাড়া স্কেলভিত্তিক প্রদানসহ চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত করলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের থেকে দফতরে ডেপুটেশনে নিয়োগের দাবি জানিয়ে এই শিক্ষক নেতা বলেন, বর্তমানে সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো আয় সরকারি কোষাগারে জমা নেয় না। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় যদি সরকারের কোষাগারে জমা নেওয়া হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সহজতর হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধি সরকারের কোনো দফতরে ডেপুটিশনে না থাকায় তাদের অধিকারের কথা সরকারের কোনো মহলে উপস্থাপন ও আলোচনা করা যায় না। তাই এমপিএভুক্ত শিক্ষক সমাজ মনে করে, মাধ্যমিক ডিজি আলাদা করা হোক এবং তা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালনাসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি আনুপাতিক হারে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হোক।
তাদের দাবির সপক্ষে সুবিধা তুলে ধরে জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে এদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সন্তানরা শহর ও গ্রামে একই মানের সরকারি স্কুলে কম বেতনে পড়ালেখা করতে পারবে। অভিভাবকদের শিক্ষা ব্যয় কমবে। ফলে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষার বৈষম্যের অবসান হবে এবং মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হবে। সত্যিকার অর্থে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হলে বর্তমানে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সরকারের সদিচ্ছা এবং সাহসী ভূমিকার প্রয়োজন- যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নিতে পারেন।
এ সময় জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো:
১. আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় শতভাগে উন্নীত করতে হবে।
২. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সকল নিয়োগ সরকারের হাতে নিয়ে বদলি ও প্রমোশন অনতিবিলম্বে চালু করতে হবে। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে EFT এর মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে।
৩. মাধ্যমিক ডিজি আলাদাকরাসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষা প্রশাসনে আনুপাতিক হারে প্রেষণে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষায় উচ্চতর গ্রেডে কর্মরতদের তদারকির জন্য কোনো নিম্নতর গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ বা দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।
৪. নতুন কারিকুলামে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ১ম ও ২য় পত্রের সমন্বিত সিলেবাস ও নম্বরপত্র (৫০+৫০) নির্ধারণ করা হয়। গণিতের প্রতিটি অধ্যায়ে শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক গণিত প্রশ্নাকারে সন্নিবেশ করা। এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাসের আদলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির প্রত্যেকটি বিষয়ে মানবন্টন প্রদানপূর্বক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার জন্য সিলেবাস ও মানবণ্টনের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
৫. এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সরকারি স্কুলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মতো বেতন স্কেল ৬নং গ্রেডে উন্নীত করাসহ দুটি উচ্চতর গ্রেড প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের দুটি উচ্চতর গ্রেড প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক-১ ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ মওলানা দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইদ্রিস আলী, অধ্যক্ষ নূরুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, তালুকদার আব্দুল মন্নাফ, মো. শাহ আলম, মো. আফজালুর রশিদ, জসিম উদ্দিন প্রমুখ।