ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করায় সাবেক এক সাংবাদিককে সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে রাশিয়া। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওই সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় টিভিতে কাজ করতেন এবং বুধবার (৪ অক্টোবর) মস্কোর একটি আদালত তার বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করে।
ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন বাড়িয়েছে এবং সাংবাদিককে দেওয়া কারাদণ্ড সেই ক্র্যাকডাউনের সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওই সাংবাদিকের নাম মারিনা ওভস্যানিকোভা। তাকে রাশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
মূলত ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর পরপরই রাশিয়ায় একটি আইন গৃহীত হয় এবং সেই আইনের অধীনে রুশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো একটি ফৌজদারি অপরাধ।
এপি বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর জুলাই মাসে রাশিয়ার রাজধানীতে একটি পোস্টার হাতে নিয়ে দাঁড়ান মারিনা ওভস্যানিকোভা। সেখানে লেখা ছিল, ‘(রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন একজন খুনি। তার সৈন্যরা ফ্যাসিস্ট। (ইউক্রেনে) ৩৫২ জন শিশু নিহত হয়েছে। তোমাকে থামাতে আর কত শিশুকে মরতে হবে?’
ওভস্যানিকোভা ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত রাশিয়ার রাষ্ট্র-চালিত চ্যানেল ওয়ানে কাজ করেছিলেন। ওই ঘটনার পর তাকে আটক করা হয় এবং পরে গৃহবন্দি করা হয়। কিন্তু গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় নিজের মেয়েকে নিয়ে ফ্রান্সে পালাতে সক্ষম হন ওভস্যানিকোভা।
এরপরও রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ তাকে ওয়ান্টেড তালিকায় রেখেছে এবং তার অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
এর আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে টিভিতে সংবাদ পাঠ অনুষ্ঠান চলার সময় ক্যামেরার সামনে যুদ্ধবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন মারিনা ওভস্যানিকোভা। মারিনার প্রদর্শিত সেই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাস করবেন না, তারা আপনাকে মিথ্যে বলছে।’
মুহূর্তের মধ্যেই সেই ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়। পরে মারিনাকে রুশ সামরিক বাহিনীকে অপমান করার জন্য অভিযুক্ত করা হয় এবং ৩০ হাজার রুবল জরিমানা করা হয়।
অবশ্য ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর গত ২০ মাসে রাশিয়ায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলা বা প্রতিবাদ করার জন্য হাজার হাজার রাশিয়ানকে জরিমানা করা হয়েছে এবং আরও শত শত মানুষকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিচারের ভয়ে সাংবাদিকসহ অনেকেই রাশিয়া ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।