চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল গত জুনে প্রকৃত (নিট) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হবে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। তবে শর্ত অনুযায়ী সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (৪ অক্টোবর) আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শর্ত পূরণের অগ্রগতি, সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে এক বৈঠকে রিজার্ভের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার বিষয়টিও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঋণের ক্ষেত্রে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল তার বেশিরভাগই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে যে পরিমাণ নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি ডলার সংকটের মাঝে প্রবাসী আয়েও বড় ধাক্কার মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এরমধ্যে গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে সেপ্টেম্বরে, ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বর্তমান দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। অন্যদিকে, দেশের ব্যাংকিংখাতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ। এই ঋণের পরিমাণ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ফলে করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এসব সমস্যার মাঝে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি। জানুয়ারিতে অনুমোদনের পর গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পায় বাংলাদেশ। তবে আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া এখন নির্ভর করছে আইএমএফের দেওয়া শর্ত প্রতিপালনের ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব নিয়ে তাই আলোচনা শুরু হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করবে আইএমএফ। আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক হারে লেনদেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। যার অংশ হিসেবে আজ প্রথম দিনের মতো আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দুই একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করেছে। বিপিএমসিক্স অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। তাদের দেওয়া যেসব শর্ত অর্জন হয়েছে তা জানিয়েছি আর যেগুলো অর্জন হয়নি; তা কেন হয়নি তাও জানানো হয়েছে।
শর্ত পূরণ ও ব্যর্থতা নিয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আজকে বৈঠক শুরু হয়েছে। তারা (আইএমএফ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে বসে আলোচনা করবে। প্রথম তথ্য নিচ্ছে তারপর আবার বৈঠক করবে। আগামী ১৯ অক্টোবর শেষ মিটিং; সেখানে তাদের মতামত জানাবে, আমরাও আমাদের বিষয়গুলো জানাব।