বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার। এ ব্যাপারে আজ রোববার (১ অক্টোবর) মতামত দেবে আইন মন্ত্রণালয়। সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে খালেদা জিয়ার পরিবার। অনুমতি পেলেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে কোথাও নিয়ে চিকিৎসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
গতকাল শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার ব্যাপারে তার পরিবার যে আবেদন করেছে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। রোববার এ ব্যাপারে মতামত দেওয়া হবে।
এর আগে খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওইদিন আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্ত যুক্তভাবে তার সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। এখন আইনের যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে খালেদা জিয়াকে দেওয়া শর্তযুক্ত মুক্তি আগে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে আগের অবস্থায় যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে।
আনিসুল হক আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। আইন অনুয়ায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই দুই দলের নেতাদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। গুঞ্জন রয়েছে, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারে। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, শর্তসাপেক্ষে বিদেশে যেতে দিতে চায় সরকার। তবে খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে বিদেশে যেতে রাজি নন।
বিএনপি নেত্রীর বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হলে তাকে আবার জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতাও একাধিকবার এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
তবে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে আইনগত কোনো বাধা দেখছেন না আইন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত পরিবর্তনে আইনগত কোনো বাধা নেই। সরকার বেশ কয়েকবার তার কারামুক্তির মেয়াদ বর্ধিত করেছে। অর্থাৎ শর্ত পরিবর্তন করেছে। অতএব বিদেশে চিকিৎসার জন্য নির্বাহী আদেশে যে খালেদা জিয়া ঢাকায় থাকবেন এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এখানে ‘ঢাকা’ শব্দটা বাদ দিয়ে নতুন আদেশ জারি করতে আমি আইনগত কোনো বাধা দেখি না।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আইনমন্ত্রীর যে ব্যাখ্যা তাকে (খালেদা জিয়া) জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এই ব্যাখ্যা আইনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা বলে আমার কাছে মনে হয় না।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে আবেদন করার কথা বলে সরকার সময়ক্ষেপণ করে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।