দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে শতকরা ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ অবস্থায় তরুণ ও শিশুদেরকে টার্গেট করে আগামী অক্টোবর মাসকে সাইবার নিরপত্তা সচেতনা মাস পালন করার কথা জানিয়েছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশন।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। চার সপ্তাহে ডিজিটাল সুরক্ষার ৪টি বার্তা দিয়ে এই সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সচেতনতার মাধ্যমে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে অক্টোবর মাস জুড়ে সবাইকে ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার অনুশীলন করানো হবে। চার সপ্তাহে ডিজিটাল সুরক্ষার ৪টি বার্তা দিয়ে এই সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এবার তরুণ ও শিশুদেরকে টার্গেট করে বেসরকারি খাতের অংশীজনদের নিয়ে সাইবার নিরপত্তা সচেতনা মাস পালন করবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে ফাউন্ডেশনের জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান জানান, বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর এটা ঘটে অসচেতনতার কারণে। এ কারণেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার এবং অনলাইনের বাসিন্দা হতে কিংবা ডিজিটাল স্পেসে কীভাবে চলতে হবে সেই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আমরা কাজ করব। সক্রেটিসের থ্রি ফিল্টার ব্যবহার শেখাব। এজন্য আমারা চাই এই মাসটি জাতীয়ভাবে পালন করা হোক। আমরা সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল হাইজিন গড়ে তুলতে চাই।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেসের (ব্লাস্ট) পরিচালক (সালিস এবং প্রশিক্ষণ) তাপসী রাবেয়া বলেন, শিশুর হাতে ডিভাইস তুলে দিলেও তাদের সুরক্ষার বিষয় লক্ষ্য রাখা হয় না। ফলে তাদের কেউ কেউ অপরাধ করছে, কেউবা আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে নারী ও শিশুদের সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মাদ আবুল হাসান বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা শিশুদের ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইস দিয়েছি কিন্তু তাদের এর ব্যবহার ও নিরাপদ থাকার কৌশল শেখাইনি। আবার আমরা নিজেরাও অসতর্ক। তাই সবাইকে সচেতন করতেই এই ক্যাম্পেইন।
ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন বলেন, কোভিড সময়ে আমরা শিশু ও এমন কিছু ব্যক্তিকে ইন্টারনেট বা ডিজটাল ডিভাইসে যুক্ত করেছি যা আরও অনেক পরে হতো। কিন্তু তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দিলেও আমরা এগুলো ব্যবহারে সচেতন করতে পারেনি। আমাদের শিক্ষিত মানুষেরাও এ বিষয়ে অসচেতন।
সাইবার নিরাপত্তার অসচেতনতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা প্রেমিকের সঙ্গে বিশ্বাসের প্রশ্নে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড শেয়ার করেন। এমনকি একজন পুরুষ শিক্ষকও এভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পাসওয়ার্ড হচ্ছে টুথব্রাশের মতো। এটি একাধিক ব্যক্তি একসাথে ব্যবহার করতে পারে না। তাই আমাদের এসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, এক বছরে রবি’র ২০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে। ১৮ কোটির বেশি এমএফএস অ্যাকাউন্ট আছে। জিমেইলে আসা প্রায় দুই শতাংশ মেইল ফিশিং। আর এই ফিশিংয়ের মাধ্যমেই ডিজিটাল প্রতারণা ও হামলা বেশি হয়। আর ডিজিটাল সুরক্ষার বিষয়টি চলমান একটি প্রক্রিয়া। একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলেই আমরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারি। পাসওয়ার্ড বা সচেতনতা হচ্ছে গাড়ির ব্রেকের মতো। ব্রেক করতে হয় কেবল নিরাপদ থাকার জন্যই নয়; গতি বাড়াতেও। ফাস্ট মুভ করতে হলেই ডিজিটাল সিকিউরিটি দরকার।