কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি বাংলাদেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে এই দেশের জনগণ ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি দেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বাধা বা বানচাল করার দেওয়ার চেষ্টা করে তবে দেশের জনগণ তাদের স্যাংশন দিয়ে দেবে।’
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি কারো শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। আমি ক্ষমতায় এসেছি জনগণের শক্তিতে, জনগণের ভোটে। আমি কাজ করছি জনগণের কল্যাণে। এটাই হলো আমাদের স্বার্থকতা। কাজেই কে স্যাংশন দিলো কে স্যাংশন দিলো না সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই, আওয়ামী লীগও চিন্তিত নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কেবল সরকারি দল নয়—বিরোধী দল যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে অন্তত একটা ভালো হয়েছে- বিএনপি যেমন ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল আবার ২০১৮ সালে নির্বাচন ঠেকাতে তারা যেমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছিল পুলিশ মেরেছিল, পাঁচশ ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছিল, তিন হাজার ৮৩৫টি যানবাহন পুড়িয়েছিল, যানবাহনের যাত্রীসহ আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছিল এই ভিসা নীতির ফলে অন্তত তারা এবার অদূর হয়তো যেতে পারবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি তারা শুধু আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে মনে রাখতে হবে আমি কিন্তু কারো শক্তিতে ক্ষমতায় আসিনি। আমি ক্ষমতায় এসেছি জনগণের শক্তিতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন; আর সেই সচেতনতা সৃষ্টি করেছি আমরা। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বহু নেতাকর্মীর রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াটাকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ে এসেছি।’
‘ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, মানুষের মধ্যে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এগুলো আমরা করেছি। ‘আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবো’ এই স্লোগান তো আমারই দেয়া। ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন তো আমরাই করেছি।’
নির্বাচনের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নির্বাচনে যতটুকু স্বচ্ছতা আছে তা আওয়ামী লীগের জন্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকগুলো উপনির্বাচন হয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। জনগণ কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আর আমরাও সরকারে এসেছি জনগণের ভোটে। কেউ আমাদেরকে হাতে তুলে দেয়নি। কাজেই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হোক সেটা আমরাই চাই।’
‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) তো পুলিশের ওপর আঘাত করে। তখন পুলিশ সেটা প্রতিরোধ করলে সেটাও ফলাও করে বড় করে প্রচার হয়। তবে এখন মিডিয়ার যুগ, মিডিয়া সব তথ্যগুলো ভালো করে দেখাক। দেখালে এবার যারা স্যাংশন দিতে চায় তারা তখন ওটাও দেখবে। একতরফা দেখবে না। শুরুটা কারা করলো সেটা আগে দেখতে হবে। তখন তারা স্যাংশন দিক।’
আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দলের নেতৃত্বে আসছেন কিনা এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা নেই। ছেলে মেয়েকে এনে চেয়ারে বসিয়ে দিবো এটা আমি বিশ্বাস করি না।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরনার্থী ঘরে ফিরে যাক এটা অনেকেই চায় না। শরণার্থী হিসেবে থাকা কত কষ্টের সেটা আমি বুঝি।
রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের যুক্ত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।