লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের কারণে আবারও বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। লোড-আনলোড শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রাখায় স্থলবন্দরের শেড, মাঠ ও সড়কজুড়ে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশের পথে মহাসড়কের একাধিক স্থানে লোড-আনলোড শ্রমিকরা দলে দলে বসে আছেন। শ্রমিকদের দাবি মজুরির টাকা সর্দারদের মাধ্যমে না দিয়ে সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার বা প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য লোড-আনলোড কাজ বন্ধ থাকবে।
এর আগে সঠিক মজুরি না দেওয়া, পারিশ্রমিকের কেটে নেওয়া টাকার হিসাব না দেওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠনের কমিটি গঠন না করে স্বজনপ্রীতিসহ নানা বৈষম্যের অভিযোগে শ্রমিক সর্দারদের বিচার এবং পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার লোড-আনলোড বন্ধ রেখে মহাসড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট করে শ্রমিকরা। গত ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের মজুরির টাকা না দেওয়া ও সাধারণ শ্রমিকদের কাজের সিরিয়াল দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও সর্দার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ১৫ জন আহত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলামকে প্রায় ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শ্রমিকরা।
এদিকে, শ্রমিক অসন্তোষ ও স্থলবন্দরের কার্যক্রমে ব্যাঘাতের ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ স্বাক্ষরিত পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান। অন্য সদস্যরা হলেন- লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম, পাটগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ ও বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্র্যাফিক) গিয়াস উদ্দিন। কমিটি রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাধারণ শ্রমিকদের ১০ জনের প্রতিনিধিদল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদকে নিয়ে বৈঠক করেন। শ্রমিকদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সমস্যা নিরসনে সর্দারপক্ষ, ঠিকাদার ও শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে লোড-আনলোড, মজুরি পরিশোধের কাজ করার প্রস্তাব করা হলে শ্রমিকেরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে কোনো প্রকার সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। আবারও বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে প্রশাসন সূত্র জানায়।
পাটগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, আজ নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আসার কথা রয়েছে। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়া গঠিত কমিটি ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি লোড-আনলোড কাজ করতে শ্রমিকদেরকে রাজি করাতে আমরা চেষ্টা করছি।