মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা মাকসুদা আক্তার মালাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারদের মধ্যে মালা ছাড়া বাকি ৬ জনই চিকিৎসক।
গ্রেপ্তার বাকি ছয়জন হলেন, ডা. কে এম বশিরুল হক (৪৮), ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু (৩৩), জাকিয়া ফারইভা ইভানা (৩৫), সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী (২৫), জাকারিয়া আশরাফ (২৬) ও মৈত্রী সাহা (২৭)।
গত ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ১২ চিকিৎসকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৮টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১০ জন মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া তাদের কাছ থেকে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্য ও মেডিকেল প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানান, প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলন করেন এবং প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর হতে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম।
গ্রেপ্তার মাকসুদা আক্তার মালা ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা। ২০১৫ সালে নিজের মেয়ে ইকরাসহ আরও ৭ জন শিক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।
গ্রেপ্তার ডা. কে এম বশিরুল হক থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত একাধিক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ডা. বশিরুল হকের নাম রয়েছে। এছাড়াও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীমের গোপন ডায়েরিতেও তার নাম রয়েছে।
গ্রেপ্তার ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার। ২০১৫ সালে ১০ জন শিক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্ন পড়িয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পায়।
গ্রেপ্তার জাকিয়া ফারইভা ইভানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ডা. ইভানা ২০০৬-০৭ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ৬০তম স্থান অর্জন করেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতা ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পান।
গ্রেপ্তার সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী রংপুর মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পান।
গ্রেপ্তার জাকারিয়া আশরাফ ও মৈত্রী সাহা ২০১৫-১৬ সেশনের ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এ দুজনও অভিযুক্ত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পান।
চলতি বছরের ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারদের আজ (বুধবার) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।