বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর রেলযোগাযোগ স্থাপন এবং কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে ডুয়েলগেজ রেলপথ। আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পের মাধ্যমে এই কাজ শেষ হয়েছে আরও কয়েক মাস আগে। ইতোমধ্যে এই রেলপথে একাধিকবার পরীক্ষামূলকভাবে পরিদর্শন কার চলাচলও করেছে। তবে নতুন এই রেলপথ কবে উদ্বোধন করা হবে তা এখনো জানা নেই সংশ্লিষ্টদের।
বর্তমান সরকারের টানা ৩য় মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে। এ অবস্থায় যেসব প্রকল্প এ বছরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব সেগুলোর প্রায় সবকটি উদ্বোধনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। কিছু প্রকল্প এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে আর কিছু উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন কবে হবে সে বিষয়ে কেউ সঠিক তথ্য জানাতে পারছেন না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেন চালানোর মতো কাজ শেষ হয়েছে। টুকিটাকি যেসব কাজ বাকি আছে, তাও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তেমন কোনো কাজ বাকি নেই। কিন্তু কবে এই পথ ধরে আন্তঃদেশীয় বাণ্যিজিক যাত্রা শুরু হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময় না পাওয়ার কারণে এ রেলপথ উদ্বোধনের তারিখ বলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সময় মিলিয়ে রেলপথটি উদ্বোধন করার একটা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কোনো কারণে সেটি হয়ে ওঠেনি।
সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি উদ্বোধন হতে পারে। যদিও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ এখন চলমান। কিন্তু উদ্বোধনের কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।
গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি প্রতিনিধি দল। সেই দলের নেতৃত্ব দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. ইয়াছিন। তখন জানানো হয়েছিল, ৯ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেলপথটি উদ্বোধন করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবু জাফর মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ রেলপথ কবে উদ্বোধন হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময় না থাকার কারণে এই প্রকল্পের উদ্বোধন পিছিয়েছে। যেহেতু এই প্রকল্পের একটা বড় অংশ ভারতের সঙ্গে রয়েছে, তাই এখানে তাদের আগ্রহ বেশি ছিল। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় ঠিক করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। দুই দেশের মধ্যকার এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৬.৭৮ কিলোমিটার। প্রকল্পটি (বাংলাদেশ অংশ) বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দেড় বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারিসহ নানা সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি তারা।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। রেলপথটি আগরতলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দেবে। প্রকল্পটি চালু হলে ৩১ ঘণ্টার পরিবর্তে এ পথে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা। আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫১৩ কিলোমিটারে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।