শ্রীলঙ্কার মাটিতে এসে স্বাগতিকদের সঙ্গে পাল্লেকেলে টেস্ট ড্র করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পয়েন্টের দেখা পেলো বাংলাদেশ। ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে সিরিজের প্রথম টেস্টে দাপট দেখালেন ব্যাটসম্যানরা। দুই দলের ব্যাটসম্যানরা দারুণ প্রদর্শনী করলেন। ম্যাচ শেষে বোঝা গেলো, এটা ছিল বোলারদের বধ্যভূমি। কারণ প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারয়ে ৫৪১ রানে ইনিংস ঘোষণা করার জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কাও ৮ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ৬৪৮ রানে। ১০৭ রানের লিড।
চতুর্থ দিনই বোঝা হয়ে গিয়েছিল, ম্যাচটা নিষ্প্রাণ ড্র’য়ের দিকেই যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। আজ টেস্টের পঞ্চম দিন দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ১০০ রান তুলে চা বিরতিতে যাওয়ার পর আর মাঠে নামা হয়নি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দু’দলই একমত হয় খেলা চালিয়ে না নেয়ার। কারণ, মাঠে নামলে কারো জেতার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং, ম্যাচ ড্র বলেই ঘোষণা করা হলো।
সে সঙ্গে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ এ নিয়ে চতুর্থবার টেস্ট ড্র করলো। এর আগে ২০০৪ সালে বুলাওয়েতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। একই বছর গ্রস আইলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ড্র। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থবার ড্র হলো এবার, সেই শ্রীলঙ্কায়। ভেন্যু ক্যান্ডির পাল্লেকেলে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এ নিয়ে ৬ষ্ঠ টেস্ট খেললো বাংলাদেশ। আগের ৫ টেস্টেই পরাজয়। এই প্রথম একটি টেস্ট ড্র করে চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় নাম তুলতে পারলো টাইগাররা। বাংলাদেশের নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ২০ পয়েন্ট। বাংলাদেশের উপরে থাকা শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট ১৪০।
পাল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সাইফ হাসানের উইকেট। কোনো রান না করেই ফিরে যান সাইফ। সকালের সূর্য সব সময় দিনের সঠিক বার্তা দেয় না, সেটা প্রমাণ করতেই যেন ব্যাট হাতে দৃঢ়তার পাহাড় রচনা করলেন তামিম ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্ত।
দু’জনের ১৪৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে বড় স্কোরের পথই বাতলে দেয়। যদিও নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হলেন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল। ৯০ রান করে ফিরে যান তিনি। এরপর অধিনায়ক মুমিনুল এবং নাজমুল হোসেন শান্ত হাল ধরেন। তাদের ব্যাটে উঠলো ২৪২ রানের বিশাল জুটি।
এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকালেন শান্ত। বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি করলেন মুমিনুল হকও। ৩৯৪ রানের মাথায় গিয়ে আউট হন শান্ত। ক্যারিয়ার সেরা ১৬৩ রান করে। মুমিনুল আউট হলেন ১২৭ রান করে। শেষ দিকে এসে হাফ সেঞ্চুরি করলেন মুশফিকুর রহীম এবং লিটন দাসও। মুশফিক ৬৮ রান করে এবং লিটন আউট হন ৫০ রান করে।
৭ উইকেট হারিয়ে ৫৪১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক মুমিনুল। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের চেয়ে যেন আরেক কাঠি সরেস শ্রীলঙ্কা। শুরুই হয়েছিল তাদের ১১৪ রানের জুটি দিয়ে। ৫৮ রান করে আউট হন লাহিরু থিরিমানে। এরপর ওসাদা ফার্নান্দো ২০ রানে এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ২৫ রানে আউট হলে কিছুটা আশার সঞ্চার হয় বাংলাদেশ শিবিরে।
কিন্তু চতুর্থদিন পুরোটা ব্যাট করলেন দিমুথ করুনারত্নে এবং ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। সারা দিনে একটিও উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এ দু’জন শ্রীলঙ্কাকে ৫১২ রানে গিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করে। এরই মধ্যে করুনারত্নে পেয়ে গেলেন ডাবল সেঞ্চুরির দেখা। তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রিপল সেঞ্চুরির দিকে। চতুর্থ দিন তিনি ছিলেন ২৩৪ রানে অপরাজিত। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা অপরাজিত ছিলেন ১৫৪ রানে অপরাজিত। পঞ্চম দিনে এসে করুনারত্নে যোগ করেন আর মাত্র ১০ রান। ডি সিলভা যোগ করেন ১২ রান। অর্থ্যাৎ ২৪৪ রানে আউট হন অধিনায়ক করুনারত্নে। উইকেটটি নেন তাসকিন আহমেদ।
১৬৬ রানে ধনঞ্জয়াকে বোল্ড করেন সেই তাসকিনই। দুই সেঞ্চুরিয়ানকে হারানোর পর দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে লঙ্কানদের। তবুও ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা ৪৩, নিরোশান ডিকভেলা ৩১ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ৬৪৮ রান করার পর, ১০৭ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। তাসকিন আহমেদ নেন ৩ উইকেট। তাইজুল ইসলাম নেন ২টি। ১টি করে উইকেট নেন এবাদত হোসেন এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন সাইফ হাসান। মাত্র ১ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হলেন শূন্য রান করে। তবে দৃঢ়তার পরিচয় দেন তামিম ইকবাল। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৪ রান করে। ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৭৩ ওভারে ৫৪১/৭ (ইনিংস ঘোষণা) (তামিম ৯০, সাইফ ০, শান্ত ১৬৩, মুমিনুল ১২৭, মুশফিক ৬৮*, লিটন ৫০, মিরাজ ৩, তাইজুল ২, তাসকিন ৬*; লাকমল ১/৮১, বিশ্ব ৪/৯৬, কুমারা ১/৮৮, ম্যাথিউস ০/১৪, ধনঞ্জয়া ১/১৩০, হাসারাঙ্গা ০/১১১, করুনারত্নে ০/৬)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ১৭৯ ওভারে ৬৪৯/৮ (ইনিংস ঘোষণা) (করুনারত্নে ২৪৪, থিরিমান্নে ৫৮, ওশাদা ২০, ম্যাথিউস ২৫, ধনঞ্জয়া ১৬৬, নিশানকা ১২, ডিকভেলা ৩১ , হাসারাঙ্গা ৪৩, লাকমাল ২৩*, বিশ্ব ০* ; আবু জায়েদ ০/৭৬, তাসকিন ৩/১১২, ইবাদত ১/৯১, মিরাজ ১/১৬০, তাইজুল ২/১৬৪, মুমিনুল ০/১৮, সাইফ ০/৫)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২৩ ওভারে ১০০/২ ( তামিম ব্যাটিং ৭৪*, সাইফ ১, শান্ত ০, মুমিনুল ব্যাটিং ২৩* ; লাকমাল ২/১৪ , বিশ্ব ০/১৮, ধনঞ্জয়া ০/৪৫, হাসারাঙ্গা ০/১১)
ফল: ড্র।
ম্যাচসেরা : দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা)