চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে মিল রেখে সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন দ্যা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, যেকোনো সৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই সবসময় পাশে থাকবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই কখনই কোনো অ্যাডভোকেসি করবে না।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কৃত্রিম সংকট যারা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পণ্যের সংকট সৃষ্টি ও বাজার অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব। চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে মিল রেখে সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। আমাদের কাজে সরকারি অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থা সহযোগিতা করছে। ব্যবসায়ীরাই আমাদের এ দেশকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে প্রাইভেট সেক্টরের একটা বড় অবদান রয়েছে।
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সৎ ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অধিদফতর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। ভোক্তারা যতদিন পর্যন্ত তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হবে ততদিন পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারিদের স্বার্থ বিবেচনায় সময়ে সময়ে কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় আবার সেসব পণ্য আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। দেশের বাজার ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পলিসি গ্রহণ করে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য (যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়) স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অধিদফতর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এসব পণ্যের অবৈধ মজুত শনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদফতর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।
ভোক্তার মহাপরিচালক আরও বলেন, মিডিয়া আমাদের সমাজের দর্পণ এবং মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের কার্যক্রম অনেক সহজে এবং দ্রুত সময়ে ভোক্তাদের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। এ জন্য তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে একটি ভোক্তাবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করার জন্য সবার সমন্বিত সহযোগিতা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১২/১৩টি সংস্থা বাজার মনিটরিং করে থাকে। তবে শুধু অভিযান পরিচালনা করে বা জেল জরিমানার মাধ্যমে বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের সংকটে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে সব সময় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না। চাহিদা ও যোগানের তারতম্যের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে না।