এশিয়া কাপের এবারের আসরে গ্রুপ পর্বের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। এরপর সুপার ফোরের ম্যাচটিতেও বাগড়া দেয় বৃষ্টি, খেলা গড়ায় রিজার্ভ ডে তে। আজ বিরাট কোহলি-লোকেশ রাহুলের শতকে প্রথম ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬ রান সংগ্রহ করে রোহিত শর্মার দল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাজে সূচনার পর ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান। বৃষ্টি বিঘ্নিত দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ পর্যন্ত বাবর আজমের দল থেমেছে ১২৮ রানেই। ফলে ২২৮ রানের লজ্জার রেকর্ড গড়ে হারল পাকিস্তান।
ভারতের দেয়া ৩৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। পঞ্চম ওভারে দলীয় মাত্র ১৭ রানেই জসপ্রীত বুমরাহর বলে শুবমান গিলের হাতে ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমাম উল হক। এরপর মাঠে নামেন অধিনায়ক বাবর আজম।
পাহাড়সম রানের লক্ষ্যে পৌছাতে আরেক ওপেনার ফখর জামানের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। তবে সফল হতে পারেননি পাক দলনেতা। একাদশ ওভারে ২৪ বল খেলে ব্যক্তিগত ১০ রানেই হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে।
এদিকে বাবরের ফেরার পরই আবার ম্যাচে হানা দেয় বৃষ্টি। ফলে বেশ কিছুক্ষণের জন্য বিঘ্নিত হয় পাকিস্তানের ম্যাচে ফেরার লড়াই। ভারী বর্ষণে আজ আর খেলা মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এক পর্যায়ে কমে আসে বৃষ্টি, আবার মাঠে নামে দুই দল।
দলীয় ৪৩ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে পথ দেখাতে এরপর ক্রিজে ফখরের সঙ্গী হন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে বৃষ্টি যেন আজ দুর্ভাগ্য সঙ্গে বয়ে এনেছিল পাক টপ অর্ডারে। স্কোরবোর্ডে মাত্র ৪ রান যোগ না হতেই দলকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার। ৫ বলে ২ রান করে শার্দুল ঠাকুরের বলে লোকেশ রাহুলের ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি।
রিজওয়ানের পর এবার মাঠে নামেন আগা সালমান। ফখরের সঙ্গে ভালো একটি জুটি গড়ার আভাসও দিয়েছিলেন তিনি। দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেছিলেন ৩০ রান। তবে আবারও পথ হারায় পাকিস্তান। বিশতম ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হন ফখর। সাজঘরে ফেরার আগে ৫০ বল খেলে ২ চারে ২৭ রান করেন তিনি।
এদিকে ফখরের পর দলকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে কুলদীপের বলেই লেগ বিফোর উইকেটের ফাদে পড়ে আউট হন সালমানও। ৩২ বলে ২৭ রান করে তিনি ফিরলে ক্রিজে ইফতিখার আহমেদের সঙ্গী হন শাদাব খান। কিন্তু মাত্র ৬ রান করতেই তিনিও পরিণত হন কুলদীপের শিকারে। ফলে মাত্র ১১০ রানেই ৬ উইকেট হারানো পাকিস্তান দলে তখন জাগে লজ্জাজনক পরাজয়ের শঙ্কা।
সেই আশঙ্কাকে সত্যি করতেই যেন দলীয় ১১৯ রানে কুলদীপেরই চতুর্থ শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ইফতিখারও। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ইনিংস থামে ৮ উইকেটে ১২৮ রানে। দুই পেসার নাসিম শাহ ও হারিস রউফ চোটের জন্য ব্যাটিং করেননি। ফলে কোহলি- রাহুলের দুর্দান্ত শতকের পর কুলদীপের জাদুকরি ঘূর্ণিতে ২২৮ রানের বিশাল জয় পায় ভারত।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিবমন গিল। প্রথম ওভারে শাহিন আফ্রিদিকে ছয় দিয়ে স্কোর বোর্ডে রান যোগ করেন রোহিত শর্মা। শুরু থেকে পাকিস্তান বোলাদের ওপর চড়াও হন এই দুই ওপেনাররা।
এই দিন পাকিস্তানের বোলাররা ছিল একদম ছন্ন ছাড়া। মারমুখী ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক পূরণ করেন গিল ও রোহিত। তবে ইনিংসের ১৭তম ওভারে প্রথম সাফল্য পায় পাকিস্তান। শাদাব খানের বলে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। দলীয় ১২১ রানে ৪৯ বলে ৫৬ রানে আউট হন রোহিত। এরপর ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি। কোহলিকে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন গিল।
তবে দলীয় ১২৩ রানে ৫২ বলে ৫৮ রান করে আউট হন গিল। তাকে সাজঘরে ফেরান শাহিন আফ্রিদি। এরপর ক্রিজে আসা রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন কোহলি। ২৪.১ ওভারে ভারত ২ উইকেটে ১৪৭ রান করার পর নামে বৃষ্টি।
সেখান থেকে রিজার্ভ ডেতে শুরু হয় খেলা। রিজার্ভ ডের শুরু থেকেই মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার রাহুল ও কোহলি। পাকিস্তানি বোলারদের কোন রকম সুযোগ না দিয়ে অর্ধশত রান তুলে নেন রাহুল ও কোহলি।
এই দুই ব্যাটারের অর্ধশতরানের পর আরও আগ্রাসী হয়ে পাকিস্তান বোলারদের ওপর চড়া হতে থাকেন। ১০০ বলে শতক পূর্ণ করেন রাহুল। তার শতকের পরেই ৮৪ বলে ক্যারিয়ারের ৪৭তম শতক পূর্ণ করেন কোহলি। সেইসঙ্গে ওয়ানডেতে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই কিং কোহলি।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬ রান সংগ্রহ করে রোহিত শর্মার দল। রাহুল ১১১ ও কোহলি ১২২ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে শাহীন আফ্রিদি ও শাদব খান নেন ১টি করে উইকেট।