জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরার মুক্তির পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সাত দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি সম্পন্ন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলে আজ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা পর্যন্ত। যেখানে খাদিজাতুল কোবরার মুক্তি দাবি জানিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য তুলে ধরে গণস্বাক্ষর করেছেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি সম্পন্নের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষার্থী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি আমাদের ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আমরা চাচ্ছি খাদিজার বিচার হোক, সে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তা আদালতে প্রমাণ হোক। কিন্তু এভাবে তাকে বিচারহীনভাবে আটকে রাখা মানবতাবিরোধী একটা কাজ।
এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক। আজ খাদিজার এই দুঃসময়ে যদি আমি, আমরা, আপনারা পাশে না দাঁড়াই তবে নিশ্চিত থাকুন কাল আমার কিংবা আপনার পরিবারের কেউ এই অপসংস্কৃতির হিংস্র থাবার শিকার হবেন। পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকবে না।
এদিকে, শেষ দিনে খাদিজার মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর করতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, খাদিজা একজন উপস্থাপিকা হিসেবে তার জায়গা থেকে যে প্রশ্নগুলো করেছে, সেখানে তো সরকারবিরোধী কিছু ছিল না। অনুষ্ঠানের গেস্ট মেজর দেলোয়ার হোসেন সরকারবিরোধী কিছু বলে থাকলে সেটা তো খাদিজার দোষ না। সে শুধু উপস্থাপিকার দায়িত্ব পালন করেছে। খাদিজার দোষ প্রমাণ হওয়ার আগে এক বছর জেলে থাকা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়। বিচারিক কার্যক্রম শুরু এবং দোষ প্রমাণ হওয়ার আগেই এক বছর একজন ছাত্রীকে জেলে থাকতে হয়েছে, ব্যাপারটা দুঃখজনক। আমি দ্রুত তার মুক্তি চাই।
খদিজার মুক্তির দাবির বিষয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট সমন্বয়কদের অন্যতম ইভান তাহসিব বলেন, নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা বিনা বিচারে কারাগারে আটক। তার নিঃশর্ত মুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ক্যাম্পাসে স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিক। খাদিজা কোনো অন্যায় করেনি, সেই কথাটাই আমরা জানিয়ে দিতে চাই। আমরা এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেব।
উল্লেখ্য, খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে ২০২২ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম এবং অন্যটির বাদী কলাবাগান থানার এসআই আরিফ হোসেন। ওই মামলায় গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন খাদিজা।
এর আগেও জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খাদিজাতুল কোবরার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ছাড়াও নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।