অবশেষে আটকে গেল ২০২২ সালের জন্য নতুন কারিকুলামে চারটি শ্রেণির বই ছাপার কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নতুন কারিকুলাম তৈরি করায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ছাপার কার্যক্রম আটকে দিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয়।
ফলে ২০২২ সালে পুরাতন সিলেবাসেই বই ছাপাতে হবে। রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকেল তিনটায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এনসিটিবির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উইং-এর দুই কারিকুলাম সদস্যকে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে নতুন কারিকুলামের ভবিষ্যৎ। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে এনসিটিবিকে পুরাতন কারিকুলামে বই ছাপাতে চিঠি দিয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়র দুই বিভাগের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।
সভার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, সভায় নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্বান্ত হয়নি। সোমবার আরেকটি মিটিং করবো। প্রাথমিকের কারিকুলামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটিও চূড়ান্ত হয়নি। তারা যে (প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রণালয়) পুরাতন কারিকুলামে বই ছাপাতে বলেছে- সেটা সভায় বলেছে।
তিনি জানান, বিকল্প কোনো মাধ্যমে নতুন কারিকুলামে বই ছাপাতে পারা যায় কি না সেজন্য দুই কারিকুলাম (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) মেম্বারকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে আলোচনা করার জন্য বলা হয়েছে। যদি দেখা যায় নতুন কারিকুলাম সংক্ষিপ্ত বা অন্যভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ আসে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, করোনার কারণে আমাদের নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে হয়। নতুন ফ্রেমওয়ার্কটা আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। অনুমোদন পেলে নতুন কারিকুলামে আগামী শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।
এদিকে গত ১৮ এপ্রিল এনসিটিবিকে বিদ্যমান কারিকুলামে প্রাথমিকের বই ছাপাতে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, এখনও আপনারা (এনসিটিবি) কারিকুলাম চূড়ান্ত করতে পারেননি, ফ্রেমওয়ার্ক অনুমোদন নেননি। ফ্রেমওয়ার্ক অনুমোদনের পরে কারিকুলামের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করে পাঠ্যপুস্তক লেখা জুন মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবেন না। টেন্ডার শিডিউল পিছিয়ে যাবে। বছরের প্রথম দিন বই দেওয়া সম্ভব হবে না। এসব কারণ দেখিয়ে পুরাতন কারিকুলামে প্রাথমিকের বই ছাপাতে বলা হয়েছে।
কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে বিদেশি এনজিওদের তৈরি করা কারিকুলামের বই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে না। তাই রোববারের সভায়ও তাদের আগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী নতুন কারিকুলাম প্রাথমিকে বাস্তবায়ন না করে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারসাম্য থাকবে না। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই ছাপানোর আগে নিশ্চিত করতে হবে প্রাথমিক স্তরেও একই রূপরেখা অনুযায়ী নতুন কারিকুলামের বই ছাপানো হবে। এটা করতে না পারলে দুই স্তরের মধ্যে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হবে। কারণ, দুই স্তরের কারিকুলাম দুই ধাঁচের হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো কমপিটেন্সি তৈরি হবে কি না সেটি যাচাই করার কাজ চলছে। এতে কোনো জটিলতা না হলে আমরা নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই মুদ্রণের অনুমতি দিয়ে দেবো।