মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সাত মাসের শিশুসহ মোট ৬ জন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলিবিদ্ধ জয় মাস্তানের মা শামসুন্নাহার বেগম বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এদিকে এ ঘটনায় বুধবার রাতে রাসেল (২০) ও আলভীকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে উপজেলার আধারা ইউনিয়নের সোলারচর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধরা হলেন, পথচারী মো. জুয়েল ব্যাপারী (২৯), জুয়েলের ভাইয়ের মেয়ে তাবাসসুম (৭ মাস), অটোরিকশা চালক জহিরুল ইসলাম (৩২)। এক পক্ষের জয় মস্তান(২০)। প্রতিপক্ষের আলভি শিকদার (১৭) ও রাসেল শেখ (২৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলা রুজু করার পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে সোলাচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আহত জয়দের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তাদের বাড়িতে শুনশান অবস্থা বিরাজ করছে। আহত জয়ের দাদা সোহরাব মস্তান তালাবদ্ধ ঘরের দরজার সামনে বসে আছে। মানুষ দেখলেই নাতির অবস্থা বর্ণনা করে বিচার চাইছেন।
শোলারচর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়া ও দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আলী হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বুধবার সন্ধ্যার কিছু আগে স্থানীয় চরডুমুরিয়া বাজার থেকে আলী হোসেন পক্ষের জয় মস্তান জহিরুলের অটোরিকশা করে সোলারচর গ্রামে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পূর্ব বিরোধের জের ধরে সোলারচর গ্রামে পৌঁছানোর পর সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সুরুজ মিয়ার পক্ষের আহাদুল, মনাসহ তিন-চারজনের একটি দল জয়ের উপর হামলা চালায়। এ সময় জয়সহ অটোরিকশা চালক জহিরুল পালানোর চেষ্টা করলে আহাদুল, মনারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন জয় মস্তান, জহিরুল হক, পথচারী মো. জুয়েল ও সাত মাস বয়সী শিশু তাবাসসুম। এসময় নিজেদের ছোড়া গুলিতে সুরুজ পক্ষের আলভি শিকদার ও রাসেল শেখও আহত হন।
সন্ধ্যায় শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জয়, জুয়েল, তাবাসসুম, জহিরুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। অন্য ৫ জন আহতের অবস্থা শঙ্কা মুক্ত হলেও গুরুতর অবস্থায় জয়ের চিকিৎসা চলছে।
জয়য়ের দাদা সোহরাব হোসেন (৭০) বলেন, জয়ের অবস্থা খুব খারাপ। সারারাত আমরা হাসপাতালে ছিলাম। বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়িতে এসেছি। জয় চোখ খুলছে না। জয়ের কিছু হলে আমি নিজেও মরে যাব। সবাইকে আসামি করে যাব। যারা আমার নাতিকে এভাবে মেরেছে, আমি তাদের বিচার চাই।
স্থানীয় সালমা বেগম বলেন, আমরা এলাকায় শান্তি চাই। কয়েকদিন পর পর এলাকায় মারামারি লাগে গোলাগুলি হয়, খুন হয়। গ্রামে শান্তিতে থাকতে পারছি না। আমরা আর এগুলো চাই না। যারা পেছনে থেকে বারবার এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদেরসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক। যাদের স্বজন যায় একমাত্র তারাই বোঝে স্বজন হারানোর কষ্ট।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন বলেন, আমরা কখনো কারো উপর হামলা করিনি। কিছু হলেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়ার লোকজন আমাদের এলাকার লোকজনকে মারধর করেন। হামলা চালায়। সুরুজদের লোকজনের হামলায় আমাদের লোক, পথচারীরা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সুরুজ মিয়া ও তার লোকজনের উপযুক্ত বিচার চাই। অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুরুজ মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, নিজেদের মধ্যে শক্তি প্রদর্শন ও আধিপত্য ধরে রাখতে দুই যুগের বেশি সময় ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। তাদের মারামারির কারণে পুরো ইউনিয়নের মানুষ অশান্তিতে আছে। কয়েক দিন পরপর তারা ভয়ংকর সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। তাদের জন্য সাধারণ মানুষও হতাহত হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে স্থানীয়, শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে একাধিকবার বসা হয়েছে। প্রতিবার মীমাংসা করার পর তাঁরা আবার সংঘর্ষে জড়ান। ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মতো তিনিও তাঁদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান।
মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খাইরুল হাসান বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার রাতে আহত জয় মাস্তানের মা শামসুন্নাহার বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।