নওগাঁর বদলগাছীতে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গ্রাম্য মাতববরের সিদ্ধান্তে গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করার ঘটনায় মামলার পর অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে থানা-পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে ওই গৃহবধূ নিজে বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার পর রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন— অভিযুক্ত গ্রাম্য মাতব্বর উপজেলার বাঁশপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাওনা পাহানের ছেলে বিমল পাহান (৩৮), রমেশ পাহানের ছেলে সুবাস পাহান (৪৫) ও ধামইরহাটের ইনসিরা গ্রামের মৃত সুবল চন্দ্রের ছেলে ভবেস পাহান (৫২)। মামলার আরও দুই আসামি শ্রীমতি রঞ্জনা রাণী ও শ্রীমতি শংকরি পলাতক রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওই গৃহবধূকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে গ্রামে সালিশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঘটনাটি গৃহবধূর মা জানতে পেরে ১৫ দিন আগে জামাইয়ের বাড়িতে এসে মেয়েকে নিয়ে চলে যান। এরপর গত ২৬ আগস্ট গৃহবধূর শাশুড়ি ওই গৃহবধূকে বাবার বাড়ি থেকে আবারও স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর গ্রামের মাতব্বররা পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সমাজচ্যুত করার পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাতব্বররা দলবদ্ধ হয়ে ওই গৃহবধূর বাড়িতে আসেন। কিছুক্ষণ পর গ্রামের মাতব্বর আসামি বিমল পাহানের হুকুমে সুবাস, রঞ্জনা, শংকরি নামের কয়েকজন জোর করে গৃহবধূর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া দেয় এবং মাথায় ঘোল ঢেলে দেয়। এরপর আসামিরা তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলে যায়।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, কারও সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পক নেই আমার। সমাজ থেকে আলাদা করা এবং সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই তারা আমার সঙ্গে এই কাজ করেছে। সবার কাছে আমাকে অপমান করা হয়েছে। আমি অপরাধীদের শাস্তি চাই।
ওসি মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান বলেন, ঘটনার পর ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে আত্মগোপনে থানা আসামি বিমলকে বদলগাছির জাবারীপুর এলাকা থেকে, সুবাসকে গয়েশপুর এলাকা থেকে এবং ভবেশকে ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।