সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে খুলনার বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের বাড়ি তল্লাশির নামে তছনছ করার অভিযোগ করা হয়। সিআইডি পরিচয়ে এ অভিযান চালানো হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সিআইডি অফিস থেকে তারা কোনো তথ্য জানতে পারছেন না।
নিখোঁজ চার চিকিৎসক হলেন- ডা. লুইস সৌরভ সরকার, ডা. নাদিয়া মেহজাবিন তৃষা, ডা. মুত্তাহিন হাসান লামিয়া ও ডা. শর্মিষ্ঠা সাহা।
সংবাদ সম্মেলনে তৃষার মা নিলুফার ইয়াসমিন, সৌরভের মা ম্যাকুয়েল সরকার, লামিয়ার মা ফেরদৌসী আক্তার ও শর্মিষ্ঠার বাবা ডা.দীনবন্ধু মন্ডল তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৮ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রাত ২টার ভেতরে সবাইকে নিজ বাড়ি থেকে সিআইডি সদস্যরা তুলে নিয়ে যান। এর মধ্যে ডা. লুইসকে তুলে নিয়ে যায় রাত ২টার দিকে। অভিযানের সময় সিআইডি সদস্যরা বাসার মালামাল তছনছ করে গেছে। আটকের কারণ জানতে চাইলে দুর্ব্যবহার করে। এ সময় তারা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমার মোবাইল নম্বর দিয়ে যায়। কিন্তু সেই নম্বরে ফোন করে তারা কোনো সাড়া পাননি।
আবেগাপ্লুত চিকিৎসকদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তাদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি। তারা বাসায় তল্লাশির নামে ব্যক্তিগত কাগজপত্র ও ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস তছনছ করে। কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। এক কাপড়ে পৃথকভাবে নিয়ে গেছেন। একটি যোগাযোগের মোবাইল নম্বর দিলেও সেটি কেউ ধরছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চারজনের পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় সিআইডি সদর দফতরে গিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে তারা নিশ্চিত হয়েছেন সদর দফতরেই তাদের সন্তানদের আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন তাদের আটক করা হয়েছে- এ ব্যাপারে সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। তিন দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের কোনো সদস্যদের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়নি। মাকে না পেয়ে চিকিৎসকদের ছোট সন্তানরা কাঁদছে। তারা দ্রুত সন্তানদের বিষয়ে তথ্য পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিভাবকরা বলেন, তাদের সন্তানরা অপরাধী হলেও কী অপরাধ করছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে- আইন অনুযায়ী তাদের অধিকার রয়েছে। তাই তাদের সন্ধান চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানরা এক সময়ে খুলনার আলোচিত ডা. তারিমের থ্রি ডক্টর কোচিংয়ে পড়াশোনা করেছে। কোচিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী ফি পরিশোধ করেছে। নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতায় তারা চিকিৎসক হয়েছেন। তাই মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যা বলা হচ্ছে- তা সঠিক নয়।
অপরদিকে নিখোঁজ চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখা। রোববার রাতে পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়।
বিএমএ’র খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, প্রায় তিন দিন ধরে নিখোঁজ চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়েছি। তারা কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলে সেটি আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু কোনোভাবেই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিন ধরে নিখোঁজ বা কাউকে আটকে রাখা যায় না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু এখানে কী হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট সকালে খুলনার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি কোচিং ‘থ্রি ডক্টরস’-এর শিক্ষক ডা. ইউনুস উজ্জামান খান তারিমকে আটক করে সিআইডি। খুলনা সদর থানা পুলিশের ওসি হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। পরদিন জানা যায়, ১৮ আগস্ট ভোররাত ও সকালে ডা. লুইস সৌরভ সরকার, ডা. নাদিয়া মেহজাবিন তৃষা, ডা. মুত্তাহিন হাসান লামিয়া ও ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল নিখোঁজ রয়েছেন। তাদেরও সিআইডি আটক করেছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়। তবে সিআইডির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।