প্রযুক্তির হাত ধরে সামরিক খাতকে শক্তিশালী করতে নানা আবিষ্কার করছে চীন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেশটির নৌবাহিনী যুগান্তকারী এক আবিষ্কারের দাবি করেছে। চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের (সিএএস) গবেষকরা সম্প্রতি একটি অতি-সংবেদনশীল ‘ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর’ (চুম্বকীয় পদার্থ যা ধাতু চিহ্নিত করতে পারে।) আবিষ্কার করার দাবি করেছে। এই আবিষ্কারকে ‘যুগান্তকারী’ বলে মনে করছেন তারা।
সিএএস জানিয়েছে, এই শক্তিশালী ‘ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর’ অনেক দূরে থাকা উন্নত ডুবোজাহাজ সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। চীনা গবেষকদের এই ‘যুগান্তকারী’ আবিষ্কারের কথা সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ শিপ রিসার্চ (জেএসআর)’ নামে এক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। খবর আনন্দবাজারের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের নতুন এই ‘ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর’ ডুবোজাহাজ শনাক্ত করতে পারবে সহজেই। ডুবোজাহাজের গতিবিধিতেও নজর রাখা যাবে নতুন এই যন্ত্রের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনা গবেষকদের এই গবেষণা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে সমুদ্রে অন্য দেশের জাহাজ, ডুবোজাহাজে নজরদারিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে চীন। এছাড়া এটি যদি দূরে থাকা ডুবোজাহাজের গতিবিধি শনাক্ত করতে পারে, তাহলে সমুদ্রপথে চীনের নজর এড়িয়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সিএএস এর গবেষকরা তাদের আবিষ্কার নিয়ে আশাবাদী। তাদের আবিষ্কারেই সমুদ্রপথে চীন সফলতার শিখরে পৌঁছবে বলে মনে করছেন তারা।
কীভাবে অন্যদেশের ডুবোজাহাজ শনাক্ত করবে চীনের এই ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর?
পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজগুলি দ্রুত গতিতে চলার সময় এক ধরনের প্রায় অদৃশ্য বুদবুদ তৈরি হয়। যা খালি চোখে চেনা কঠিন। ডুবোজাহাজ গতি বাড়ালে বুদবুদের সংখ্যাও বাড়ে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই বুদবুদই শনাক্ত করতে পারবে তাদের তৈরি ম্যাগনেটিক ডিটেক্টরটি।
ডুবোজাহাজ শনাক্তকরণের মূলত পদ্ধতি দুই ধরনের। সেগুলো হলো— ‘ক্যাভিটেশন’ এবং ‘ম্যাগনেটিক অ্যানোমালি ডিটেকশন (এমএডি)’। ‘ক্যাভিটেশন’ কাজ করে পানির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় ডুবোজাহাজের প্রপেলার এবং মধ্যবর্তী অংশ দ্বারা বুদবুদগুলি তৈরি এবং ভেঙে যাওয়ার উপর ভিত্তি করে। ডুবোজাহাজ চলার ফলে জলে উৎপন্ন বুদবুদগুলো স্বতন্ত্র সংকেত তৈরি করে, যা দেখে প্রতিপক্ষ ডুবোজাহাজের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। তবে ডুবোজাহাজ খুব দূরে থাকলে সেই সংকেত শনাক্ত করা কঠিন।
অন্য দিকে, ডুবোজাহাজের ‘ফেরোম্যাগনেটিক’ পদার্থ (মূলত ইস্পাত) পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে যে বাধার সৃষ্টি করে, সেটি চিনে ডুবোজাহাজ শনাক্ত করার পদ্ধতি হলো এমএডি। এমএডি পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার (এএসডব্লিউ)’ বিমানের সাহায্যে ডুবোজাহাজগুলি শনাক্ত করা হয়।
তবে গবেষণাপত্র অনুযায়ী, এবার ডুবোজাহাজ চিহ্নিত করার আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছে চনী। ডুবোজাহাজের গতিবিধিতে তৈরি হওয়া বুদবুদ একটি কৃত্রিম বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মধ্যে অতি নিম্ন কম্পাঙ্কের সংকেত তৈরি করে। এই সংকেত শনাক্ত করে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবে চীনের তৈরি ‘ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর’।