লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ট্রাক্টর ব্যবসায়ী নজির ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় মামলা না নেওয়ায় রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনকে আদালতে উপস্থিত হয়ে কারণ ব্যাখ্যার (শোকজ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের (রামগতি) বিচারক ভিক্টোরিয়া চাকমা এ আদেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী ইফতেখার মাহমুদ ফয়সাল বলেন, আহত বাবুলের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বাদী হয়ে চরপোড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার ও তার ছেলে চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা রুবেলসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত ঘটনাটি আমলে নিয়ে রামগতি থানার ওসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা (এফআইআর) নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে থানায় মামলা না নেওয়ায় ওসি আলমগীর হোসেনকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- মো. লিটন, মো. রাকিব, আল আমিন, শাহ আলী রতন, মো. রাজু, মো. পারভেজ, মো. বাবু, মো. হানিফ, আবদুর রহিম, রাকিব, আবুল কালাম ড্রাইভার, মো. সাজ্জাদ ও মো. আজমির এবং অজ্ঞাত ৩০ জন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, আহত বাবুল চরপোড়াগাছা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। যুবলীগ নেতা রুবেলসহ অভিযুক্তদের সঙ্গে তাহেরের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। অভিযুক্তরা তাহেরের জমি জোরপূর্বক দখলের পাঁয়তারা করে আসছে। ৯ আগস্ট রাতে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে দলবল নিয়ে বাবুলদের বাড়িতে ঢোকে। এ সময় তারা ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তখন ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে বাবুলদের প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
যাওয়ার সময় অভিযুক্তরা বাবুলকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। পরদিন ভোরে চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের নির্দেশে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক চরকলাকোপা গ্রামে বিরোধীয় জমিতে ঘর নির্মাণ করতে যায়। এতে বাধা দিলে বাবুলকে তারা এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে রুবেল ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবুলের মাথায় আঘাত করে। পরে অভিযুক্তরা অন্যরাও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বাবুলের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবুল ঢাকার প্রাইম অর্থোপেডিক ও জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাবুলের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার ছেলে রুবেলসহ অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীর ওপর হামলা চালায়। আমার স্বামী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি অভিযুক্তদের সুষ্ঠু বিচার চাই।
চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা রুবেল বলেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. রাকিবের কাছ থেকে আমি জমি কিনে চাষাবাদ করে আসছি। ওই জমি বাবুলরা জোরপূর্বক দখলে নিতে চায়। এতে বাধা দিতে গেলেই তারা আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখন তারাও আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে বলে শুনেছি।
চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার বলেন, জমিটি আমার ছেলে ক্রয় করেছে। বাবুলরাও তাদের জমি বলে দাবি করছে। এনিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও বাবুলরা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। ঝামেলা না করতে ৫ লাখ টাকা দিতে চাইলে বাবুলরা নেয়নি। ঘটনার দিন জমি দখল করতে গেলে আমার ছেলের পক্ষ ও বাবুলদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমি বাবুলের পরিবারকে কয়েকবার মামলা করতে আসতে বলেছি। কিন্তু তারা আসেনি। তারা কী কারণে আসেনি তাও জানায়নি আমাকে। বিষয়টি আমি আদালতকে জানাবো।