মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অভিযান চালিয়ে একটি জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট-সিটিটিসি। সেখান থেকে নারী-পুরুষসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। এ সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য ও ‘জিহাদি বই’ উদ্ধার হয়। তারা মূলত হিজরত করতে সেই আস্তানায় জড়ো হয়েছিলেন। প্রশিক্ষণের জন্য কোনো পাহাড়ে তাদের নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের সবাইকে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের বলা হয়েছিল- পৃথিবীতে ইমাম মেহেদি আসার আগে যিনি আসবেন তিনি ইমাম মাহমুদ। প্রশিক্ষণের জন্য হিজরত করে তাদের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, আপনারা জানেন যে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ হিজরত করেছে। কোনো কোনো জায়গায় থানা পুলিশকে অভিভাবকরা রিপোর্ট করেছেনম আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থানা পুলিশকে অভিযোগ করা হয়নি। বা অভিভাবকরা থানায় যাননি। এমন কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কাজ শুরু করি। তাদের মধ্যে ছিলেন একজন সিরাজগঞ্জের ডাক্তার দম্পতি। যশোরের অধিবাসী ঢাকার নটরডেম কলেজের এক ছাত্র ছিলেন। তার নাম ফাহিম। এছাড়াও জামালপুরের এরশাদুজ্জামান শাহীন ছিলেন। এরকম তিনজনের তথ্য আমরা প্রাথমিকভাবে পাই।
আসাদুজ্জামান বলেন, এছাড়াও আমাদের কাছে তথ্য ছিল যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া এলাকার কিছু পরিবার জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরত করেছে বা তারা হিজরতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সংগঠনের মতাদর্শে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এই সংগঠনের হয়ে তারা কাজ করছে- এমন তথ্য আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। গত ৭ আগস্ট আমরা মিরপুর থেকে ১০ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করি, যা মিডিয়াকে জানানো হয়নি। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। এছাড়া শিশুও ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পারি, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর থেকে একযোগে সাতটি পরিবার হিজরতের উদ্দেশে ঢাকায় এসেছে এবং তারা রিসিভারের জন্য ওয়েট করছে। তাদের রিসিভ করে জঙ্গি আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সেই ব্যক্তিকে আমরা গ্রেফতার করতে পারিনি।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, যারা এসেছিল তাদের গ্রেফতারের পর আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাই। গত পরশু দিন একইভাবে ফরহাদ নামে আমরা আরও একজনকে গ্রেফতার করি। এই ফরহাদ জঙ্গি আস্তানায় ছিলেন এবং সেখান থেকে ফিরে এসে তার পুরো পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি তার বাবা-মা স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে তাদের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে হিজরতের জন্য বের হয়েছিলেন।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা জানতে পারি- মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কোনো একটি পাহাড়ে তাদের আস্তানা আছে। পরশু দিন ঢাকা থেকে সোয়াট টিমসহ আমরা রওনা হই এবং একটি সফল অভিযান পরিচালনা করি।
এই কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক দিন আগে সিরাজগঞ্জ থেকে যে ডাক্তার দম্পতি হিজরত করেছিল এই ডাক্তারকে আমরা পাইনি। তবে তার স্ত্রীকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া আরও তিনজন ছিলেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সিরাজগঞ্জের ডা. ইমাম মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই তিনজন জিহাদের জন্য হিজরত করছিলেন। তবে আমরা তাদের পাইনি। তাদের বোঝানো হয়েছিল- জিহাদের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে হিজরত করা। জিহাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেই কথিত ইমাম মাহমুদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা জিহাদের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন। তবে মিরপুর থেকে হিজরতে যাওয়ার আগে তাদের একটি প্রস্তুতি আমরা নস্যাৎ করে যেতে সক্ষম হয়েছি।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা পাহাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছিলাম। গতকাল সেখানে অপারেশন হিলসাইট নামে একটি অভিযান চালিয়েছি। সেখান থেকে আমরা ১০ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের আমরা হেফাজতে নিয়েছি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কোনো ধরনের রক্তপাতহীনভাবে আমরা অভিযানটি শেষ করেছি।
আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযান শেষ করার পর আমাদের ডিসপোজাল টিম সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে। নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা এবং কিছু স্বর্ণালঙ্কার, ধারালো ছুরি এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য কমবেট বুট, বক্সিং বক্স, বিপুল পরিমাণ জঙ্গি বইও উদ্ধার করা হয়েছে।