বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেণু’র জীবন ও কর্মভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’র লোগো ও ওয়েবসাইট উন্মোচন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (৭ আগস্ট) জাতীয় জাদুঘরে এই লোগো ও ওয়েবসাইট উন্মোচন করেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজা রামমোহন রায়ের সময় বাংলায় রেনেসাঁ হয়। কিন্তু এদিকে (পূর্ব বাংলা) রেনেসাঁ এসেছে একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। বেগম রোকেয়ার পেছনে যেমন ছিলেন তার স্বামী তেমন বঙ্গবন্ধুর পেছনে সর্বদা সহযোগিতা নিয়ে ছিলেন বঙ্গমাতা। ৭ মার্চের বক্তব্যের আগে যখন বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে জিজ্ঞেস করেন এত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে কী বলবো, তখন বঙ্গমাতা বললেন তুমি এতদিন যা বিশ্বাস করে এসেছো সেটায় বলো। বঙ্গমাতার ছিল এত আত্মমর্যাদা, সেটা ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তার ছবিটা গভীরে দেখলে বোঝা যায়।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, টাকা দিয়ে সব হয় না, হলে বিশ্বের ধনীরা সব শিল্প সাহিত্যের মালিক হয়ে যেতো। শিল্পের জগতে এসে এই সিনেমা নির্মাণে হাত দেওয়ার জন্যে মারুফা আক্তার পপিকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু করার জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তিনি বঙ্গমাতা। ৩ হাজার ৫৩ দিন বঙ্গবন্ধু কারাগারে ছিলেন, যখনই কারাগারে যেতেন তখন বঙ্গমাতা একটা নোটবই, খাতা-কলম। এজন্যই আমরা পেয়েছি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ বিভিন্ন বই। পুলিশের কাছে থাকা তথ্য দিয়েও আমরা বই আকারে প্রকাশ করবো।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সকল অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু নিজে পর্দার অন্তরালে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন দলের নেতাকর্মীদের আর্থিক সহয়তা করেছেন, যখন তিনি নিজেও আর্থিক সংকটে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আগরতলা মামলায় যখন কারাগারে তখন তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তানে আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ আছে, সে সময় আওয়ামী লীগের নেতারাও বললেন, পাকিস্তানে যেতে। কিন্তু বেগম মুজিব বললেন, বঙ্গবন্ধু যাবেন না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সহমরণেও গিয়ে তিনি চিরঋণী করে গিয়েছেন আমাদের। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন তখন কিছু লেখার জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাসহ তিনটি বই লেখার পেছনেও অবদান বঙ্গমাতার। নতুন প্রজন্মের যারা তাকে দেখেননি তাদের জন্যে এ চলচ্চিত্রের প্রয়োজন আছে।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক মারুফা আক্তার পপি বলেন, বঙ্গমাতার প্রখর দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃঢ়তা আমাকে এত বেশি মুগ্ধ করেছে তার পরে এই সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা মাথায় এসেছে। টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু তারপর জাতির পিতা হওয়ার পেছনের শিল্পী হচ্ছেন বঙ্গমাতা। এই বার্তাটা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে দিতে চায়। বই পড়ে, ইতিহাস পড়ে, বঙ্গমাতার বড় মেয়ে শেখ হাসিনার কাছে থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি সেটা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও হাসুমণির পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোর্শেদুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেণু’র জীবন ও কর্মভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’র লোগো তৈরি করেছেন সনজীব দাস অপু ও ওয়েবসাইট নির্মাণ করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস পাভেল।