ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেছেন, আগে এফবিসিআইয়ের প্রেসিডেন্টসহ নির্বাচন হতো। তখন আমাদের এতো ভোটার বা সেক্টর ছিল না। বর্তমানে যে নিয়মে নির্বাচনটা হচ্ছে, সেটা আসলে যুক্তিযুক্ত না। এখানে অনেক সেক্টর আছে যাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। আমাদের নতুন যে আইনটা হয়েছে এর সঙ্গে বিধিটাও হওয়ার কথা ছিল। এটা হলে ক্লাস্টারিং থেকে প্রতিনিধিত্ব আসতো। নমিনেটেড সিস্টেমটা আর থাকতো না, সবাই অংশগ্রহণ করতে পারতো।
সোমবার (৩১ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন আয়োজিত হলে তা উৎসবমুখর হয়। এবারের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের কথা ব্যক্ত করছেন। এফবিসিসিআই মূলত এপেক্স বডি, এটা পলিসি লেভেল নিয়ে কাজ করার স্থান। আমি আশা করছি ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করবেন।
তিনি আরও বলেন, চ্যালেঞ্জ অবশ্যই রয়েছে। কোভিড পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেটাকে আরও উসকে দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির বাজারে অস্থিরতাসহ নানান চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা রয়েছি। সামনে জাতীয় নির্বাচনও রয়েছে।সুতরাং এবারে যারা নির্বাচিত হবেন, তাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা প্রধানত যেসব দেশে রপ্তানি করে থাকি, সে ইউরোপেও মূল্যস্ফীতির কারণে অবনতি শুরু হয়েছে। আমাদের এখন রপ্তানির জন্য বিকল্প পন্থা তৈরি করতে হবে। নন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে আমাদের শিফট করতে হবে। আমি আশাবাদী, আমাদের নতুন নেতারা সেটা করতে সফল হবেন।
এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, কোভিডের সময়কার ধাক্কাটা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। স্বাভাবিক ক্যাশফ্লো এখনো ফিরে আসেনি। সুতরাং যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের মাথায় রাখতে হবে যে প্রবলেমগুলো কি এবং তার সমাধান কি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামনে যাই হোক না কেন, স্বাধীনতা যদি হরণ করা হয় তাহলে তারা সাসটেইন করতে পারবে না।
ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্যানেল লিডার মাহবুব আলম বলেন, এখন চ্যালেঞ্জটা বিশ্বব্যাপী। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দায়িত্ব নিতে চাই। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ব্যবসায়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তারা। এফবিসিসিআই এপেক্স বডি তাদের নিয়ে কাজ করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, এখন এলসি লিমিটেশন আছে, পণ্যের দাম বেশি, মূল্যস্ফীতি। তাছাড়া সেক্টর চ্যালেঞ্জ আছে, ব্যবসায়ীক চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাদের পাশে থাকতে চাই।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল সিলেকশন নির্বাচনর জন্য। আমি তাদের কথায় রাজি হইনি। আমিসহ তিনজন কঠোর অবস্থানে ছিলাম নির্বাচনের জন্য। কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলে সে ব্যবসায়ীর কথা বুঝবে। নির্বাচন হলে ব্যবসায়ীরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান, তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বুঝতে পারেন। এতে সম্পর্ক ভালো হয়, প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীর মনের কথা বুঝতে পারেন। এ কারণে আমি নির্বাচনে এসেছি।
ভোট নিয়ে তিনি বলেন, কয়েকটি ভোটারের ভোট নিয়ে আপত্তি দিয়েছি যেটা এখনও গ্রহণ করা হয়নি। অনেক মৃত ভোটারের ভোটের কার্ডগুলো নিয়ে নেওয়া হয়েছে, আশঙ্কা করছি তাদের ভোট দেওয়া হতে পারে। কয়েকটি ভোট যেগুলো ভুয়া তাদেরও তালিকায় আনা হয়েছে। আদালতে স্টে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এরপরও সবকিছু ঠিক থাকলে আমরাই পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হব।
উল্লেখ্য, এফবিসিসিআইয়ের ২০২৩-২০২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। সোমবার সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা করে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে আগামী ২ আগস্ট এফবিসিসিআই সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ছয়জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন।