প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও শিপ সার্ভেয়ার এসএম নাজমুল হক এবং তার স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৩০ জুলাই) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি সাহেলা নাজমুল ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৮০ লাখ ২২ হাজার ২৫৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দিয়েছন। সম্পদের মধ্যে রয়েছে খুলনার ৩৭/১, রায়পাড়া রোডে দুই কাঠা জমিতে তিন তলা বাড়ি, ঢাকা জেলার বাড্ডা থানার বড়ুয়া মৌজায় পাঁচ কাঠা জমি, সিদ্ধেশ্বরীতে ২য় তলায় ৭০০ বর্গফুটের একটি দোকান, তুরাগ থানার ভাটুলিয়া মৌজায় ৩৩ শতাংশ জমি, উত্তরার ১৮নং সেক্টরের উত্তরা প্রকল্পে ফ্ল্যাট ও পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমির প্লট। সব মিলিয়ে দুদকের অনুসন্ধানে এক কোটি ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
আর সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে আসামি সাহেলা নাজমুলের নামে দুই কোটি ৫০ লাখ ৬২ হাজার ২৫৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে স্বামীর ৭০ লাখ টাকাও রয়েছে। অর্থাৎ অনুসন্ধানকালে সাহেলা নাজমুল ঘোষণাকৃত সম্পদ বাদ দিলে ৪৬ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ গোপন করার তথ্য পাওয়া যায়। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে যার পরিমাণ দুই কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ২৫০ টাকা।
এছাড়া অনুসন্ধানে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজার ১৩১ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা তিনি তার স্বামী ড. এস এম নাজমুল হক কর্তৃক চাকরিকালীন ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করে বৈধ করতে স্ত্রীর নামে গড়েছেন। যে কারণে স্ত্রীকে প্রধান আসামি এবং স্বামী নাজমুলকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় এবং দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২), ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ৫ লাখ ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন নৌ-পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এস এম নাজমুল হক। অভিযোগ ছিল, মেসার্স সৈয়দ শিপিং লাইনসের এমভি প্রিন্স অব সোহাগ নামীয় যাত্রীবাহী নৌযানের রিসিভ নকশা অনুমোদন এবং নতুন নৌযানের নামকরণের অনাপত্তিপত্রের জন্য নাজমুল হকের কাছে গেলে তিনি ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করেন। এরপর দুদক ঘুষের টাকার কিস্তি বাবদ পাঁচ লাখ টাকা রাজধানীর সেগুন হোটেলে বসে যখন নাজমুল হক গ্রহণ করছিলেন, ঠিক তখনই ওত পেতে থাকা দুদকের বিশেষ দলের সদস্যরা ঘুষের টাকাসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। ওই দিনই রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। যা এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।