দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এমন ঘোষণা দিয়ে শান্তি সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে দলটি। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠন-যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এছাড়া সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায় বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী শরিক রাজনৈতিক দলগুলো ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করবে। পাল্টাপাল্টি এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী বাশির মধ্যে চরম উদ্যোগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দেশের বড় দুই দলের এ সমাবেশ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আজকের সমাবেশে কী হতে যাচ্ছে, তা দেখতে সবার দৃষ্টি এখন ঢাকায়।
এর আগে গত দুদিন সমাবেশ নয়াপল্টন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাকি গোলাপবাগে হবে-এ নিয়ে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়। উচ্চ আদালতের আপত্তি থাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং কর্মদিবসে জনভোগান্তির কারণ দেখিয়ে নয়াপল্টনে বৃহস্পতিবার সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পরে বিএনপি একদিন পিছিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সমাবেশ করার অনুমতি চায়। বিএনপির ঘোষণার পর আওয়ামী লীগও তাদের সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে করার সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের সমাবেশ হবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। এর কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশও বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়।
এর আগে গত ১২ জুলাই সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এরই মধ্যে এক দফা দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে দুদিন পদযাত্রা করে দলটি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। ওই দিন অনুমতি না পেয়ে শুক্রবার মহাসমাবেশ করছে দলটি।
মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের সব জেলার নেতাকর্মীদের রাজধানীর সমাবেশে যোগ দিতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় টানা কয়েকদিন ঢাকায় অবস্থান করতে হতে পারে বলেও তাদের জানানো হচ্ছে।
মহাসমাবেশ থেকে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়াসহ লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। ধীরে ধীরে কঠোর আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি কিংবা ঘেরাওয়ের ডাকও আসতে পারে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানের পরিকল্পনা দলটির।
অপরদিকে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই বিকেল ৩টায় শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগে তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। শান্তি সমাবেশে তরুণ-যুবকদের ঢল নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তিন সংগঠনের নেতারা। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদেরও পাশে চায় তারা।
শান্তি সমাবেশ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা গণতন্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে সন্ত্রাসী রাজনীতিকে বৈধতা দিতে চায়। তারা শান্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে রক্তপাত, খুন, গুম ধর্ষণ হত্যা। সমাবেশের নামে বিএনপি কোনো অহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করলে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ, সর্বোপরি জনগণ তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।