গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আপনাদের কারণে রাষ্ট্রদূতগণ বিভিন্ন রকমের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করেন। আর আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে।’
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দেশ এগিয়ে চলেছে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
সম্প্রতি ঢাকা- ১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয় ১৩টি পশ্চিমা মিশন। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার পশ্চিমা ১৩ মিশনকে ডেকে ঢাকার অসন্তোষের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাকে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হাজির হন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা। এছাড়া কানাডা, ডেনমার্ক ও সুইডেন দূতাবাসের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও আসেন। হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়া পশ্চিমা মিশনের এসব কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকার যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল তাদের দূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’
একই বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী রোম সফর করে ঢাকায় ফিরেছেন। হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইতালিও ছিল। দেশটির সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রীপর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো অসন্তোষ জানানো হয়েছে কি না? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কিছু বলিনি। এটা ভদ্রতার জায়গা। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) ময়লা, এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন। আমরা এটা নিয়ে আলাপ করিনি। আর আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কথা বলা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে— উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘সাম হাউ, এটা একটা কালচার তৈরি হয়েছে অনেক দিনের। এটা বন্ধ করা উচিত। এখন সময় এসেছে এটা বন্ধ করার।’
এর দায় কি রাজনীতিবিদদের নেই— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এটি তৈরি করেছেন। আমরা কালচারটা পছন্দ করি না।’
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের বক্তব্য বা হস্তক্ষেপ বন্ধে সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রোম সফরে ইউরোপে নিযুক্ত বাংলাদেশি দূতদের নিয়ে বৈঠকের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে একটা বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা বলেছি, আমাদের দেশ সম্পর্কে অনেক দেশের জ্ঞান সীমিত। আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন— এসব নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রায় ১০টি বিশেষ ব্রিফ তৈরি করেছে। আমরা বলেছি, আপনারা এটা শেয়ার করেন।
‘এমনকি আগুনসন্ত্রাসী নিয়েও বই তৈরি করেছি আমরা। আমরা বলেছি, আপনারা (বাংলাদেশি দূত) ওদের (বিদেশি) সঙ্গে শেয়ার করবেন, জানান দেবেন। এগুলো নিয়ে জানাবেন। তাতে তারা আহমকের মতো হঠাৎ করে বিবৃতি দেবে না। কেউ একজন তাকে (বাংলাদেশি নাগরিক) ধরল আর সে না জেনে কথা বলে দিল!’
মোমেন বলেন, কখনও কখনও তার তহবিলে পয়সা দিল, আর তারা বলে ফেলল। এজন্য আপনাদের (বাংলাদেশি দূত) এটা বড় দায়িত্ব। আপনারা তাদের সঙ্গে (বিদেশি) সাক্ষাৎ করে বড় বড় ইস্যু সম্পর্কে জানান দেবেন। এ ব্যাপারে তাদের জ্ঞান বাড়বে।