দিনভর নানা দেন-দরবার, বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য শেষে ঘোষণা এলো বৃহস্পতিবার নয়, শুক্রবার (২৮ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি।
বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা গত ২৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ আদালতের আপত্তি এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে জনদুর্ভোগের অজুহাতে সমাবেশ করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। যদিও ইতোপূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ ও মহাসমাবেশের দৃষ্টান্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি বরাবরই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী, তাই সরকার ও সরকারদলীয় বিভিন্ন বাহিনীর নানা উসকানি, এমনকি গত প্রায় এক বছরে ২০ জন নেতাকর্মী হত্যা ও অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হওয়ার পরও সীমাহীন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে এবং সারা দেশের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৮ জুলাই (শুক্রবার) দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশের ঘোষণা দিচ্ছে। আশা করি, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত যে কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যে কোনো অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃতপক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বাধা হিসেবেই দেখবে। এমন অপচেষ্টায় নিয়োজিতদের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারী হিসেবেই গণ্য করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছিলেন ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। ওই ঘোষণার পর একই দিন শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে দল দুটির সমাবেশ নিয়ে নেতাকর্মীরা নানা বক্তব্য-বিবৃতি দেন, সারা দেশে তৈরি হয় রাজনৈতিক উত্তাপ।
বিএনপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়। আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি।
অনুমোদন না মেলায় মহাসমাবেশ কোথায় হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে দলটি। বুধবার সারাদিন একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে দিনশেষে হয়তো পুলিশের অনুমতি মিলবে এবং জানা যাবে কোথায় হবে বিএনপির মহাসমাবেশ। সেই প্রত্যাশায় বিকেল থেকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশি অনুমোদন মেলেনি। পুলিশ বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়। তবে, বিএনপি এবার কোনোভাবেই গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে রাজি নয়।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যার পর বৈঠকে বসে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়ে দেওয়ার। বৈঠক শেষে সে কথা জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।