২৭ জুলাই বিএনপি ঢাকাতে সমাবেশ করবে- এ ঘোষণা এসেছে ২২ জুলাই। আর ২৪ জুলাই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়- একইদিন তারা করবে শান্তি সমাবেশ। বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের এই কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টি বলতেও নারাজ দলটি।
অতীতে একইদিনে বড় দুই রাজনৈতিক দলের বড় কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর ঘটনার নজির রয়েছে। তাই আগামীকালের কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাতে কী হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে অনেকের।
শান্তি সমাবেশে ক্ষমতাসীনরা জনসমুদ্রের প্রত্যাশা করছে। তিন সংগঠনের এ সমাবেশে কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে টানার টার্গেট রয়েছে।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ২৭ জুলাই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশ করতে যাচ্ছি। এতে কয়েক লাখ নেতাকর্মী, সমর্থক উপস্থিত হবে। আমরা সেদিন দুই পর্বে সমাবেশটি পরিচালনা করব।
তিনি আরও বলেন, বেলা ১১টা থেকেই নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে জড়ো হবে। দুপুর ১টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হবে। সেখানে দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তি হবে। তারপর বিকেল ৩টায় আলোচনা সভা শুরু হবে।
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের এই কর্মসূচিকে কোনোভাবেই পাল্টাপাল্টি বলতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। মঙ্গলবার দুপুরে এক মতবিনিময় সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা (বিএনপি) ডেকেছেন সমাবেশ আর আমাদেরটা হলো তারুণ্যের জয়যাত্রা। এখানে পাল্টাপাল্টি হলো কী করে? কোথায় পাল্টাপাল্টি হলো?
এ কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টি না বললেও রাজধানীকে নিজেদের দখলে রাখতে কয়েক লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থককে আগামীকাল জড়ো করতে চায় আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সমাবেশে আসার জন্য ঢাকা মহানগর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের নেতাদের বার্তা পাঠানো হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
কোথায় কোন দলের সমাবেশ
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ সমাবেশ করতে যাচ্ছে। এখনও সমাবেশের অনুমতি না পেলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ করতে চায় দলটি।
অন্যদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ নামে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন।
সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আজ সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৯টি দলের আবেদন পেয়েছি তাদের সমাবেশ করার জন্য। আমরা পর্যালোচনা করে কয়েকটি পার্টিকে অনুমতি দেব। যারা অনুমতি পাবে তাদের রাজনৈতিক সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়ার্কিং ডেতে বিশাল বিশাল জনসভা করে লাখ লাখ লোককে রাস্তায় আটকে রাখার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে, তারা যেন ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডেতে না দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আর যারা সমাবেশে আসবেন তারা যেন লাঠিসোঁটা বা ব্যাগ না নিয়ে আসেন। আমি সব রাজনৈতিক দলকে বলব আপনারা সমাবেশ করেন কিন্তু জনগণকে কষ্ট না দিয়ে। হয়তো ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেলে আমাদের বাধ্য হয়ে এসব কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হতে পারে।
কেন তারা শান্তি কমিটির মতো শান্তি সমাবেশ করে?
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচির বিষয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন রাখেন? বিএনপির কর্মসূচি পূর্বঘোষিত, অথচ একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করলে তখন কি জনদুর্ভোগ হয় না? বিএনপির কর্মসূচির দিন কেন আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করে? কেন তারা একাত্তরের শান্তি কমিটির মতো শান্তি সমাবেশ বা শান্তি মিছিল করে?
বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে উসকানিমূলক এবং নিজের দলের সন্ত্রাসীদের আশকারা দেওয়ার শামিল বলেও দাবি করেন রিজভী। তিনি বলেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই- এটি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের বাধা প্রদান করা, হামলা করা এবং তাদের হত্যা ও জখম করা।