বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম করোনার আগের সময়ের মতো ফিরে যাচ্ছে। করোনার প্রভাবে তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজারে ধস নামলেও সে পরিস্থিতি কাটতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের দাম গড়ে ১৪ শতাংশ বাড়তে পারে।
ধাতব পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। গত বছর জ্বালানির দামে ধস নামলেও এ বছর ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দর ৫৬ ডলারে স্থির হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল পণ্যবাজারের পূর্বাভাস প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সেমি-এনুয়্যাল কমোডিটি মার্কেট আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর করোনার প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় নিত্যপণ্যের বাজারেও ধস নামে।
তবে এ বছর প্রথম তিন মাসের চিত্রে সেই পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। এ বছর নিত্যপণ্যের বাজার করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মতো হবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে করোনার নতুন সংক্রমণ কোন দিকে যাচ্ছে তার ওপর। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানির যে দর ছিল এ বছর তার থেকে এক-তৃতীয়াংশ বাড়তে পারে। জ্বালানি চাহিদা ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আগামী বছর অর্থাত্ ২০২২ সালে ৬০ ডলারে থাকতে পারে তেলের দর। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট আয়ান কোস এ বিষয়ে উল্লেখ করেন, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার। তবে এই ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেও রয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক হারে চাহিদা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে ঋণাত্মকও হতে দেখা যায় তেলের দাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম শুরুর পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সেই সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে ৬০ ডলারে থাকতে পারে অপরিশোধিত তেলের দর। যদি করোনার সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পায় সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও সীমিত হয়ে পড়বে। এর ফলে তেলের দাম আবার পড়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়াতে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামী বছরও অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবকাঠামো বড় বিনিয়োগ হওয়ায় অ্যালুমিনিয়াম, কপার এবং রডের চাহিদা বেড়েছে। কার্বন নিঃসারণ কমাতে বৈশ্বিক উদ্যোগের ফলে ধাতব পণ্যের চাহিদাও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বছর কৃষিপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার জন্য শুধু চাহিদা বৃদ্ধিকেই নিয়ামক হিসেবে মনে করা হচ্ছে না। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে কৃষিপণ্যের উত্পাদন কমে যাওয়াও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে চীনে খাদ্যপণ্য আমদানি বাড়িয়েছে। চাহিদা ও জোগানের প্রভাবে পণ্যের দাম উঠানামা হয়ে থাকে। আশা করা হচ্ছে, ২০২২ সালে কৃষিপণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়ে আসবে। কোভিডের কারণে বিশ্ব জুড়েই খাদ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছিল। বর্তমান সময়ের দাম বৃদ্ধিকেও স্থিতিশীল মনে করছে বিশ্বব্যাংক। কোভিডের মতো দুর্যোগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগী হতে বলেছে বিশ্বব্যাংক।