সুদের টাকার জন্য গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার বাড়িতে এক মাস ধরে আটকে রাখা হাসান আলী (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার দায়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরা হলেন- গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মজিবর রহমান ও উপপরিদর্শক (এসআই) মোশাররফ হোসেন।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাত ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই দুই কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই ওই দুই কর্মকর্তাকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমানের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
জানা যায়, সুদের পাওনা টাকার জন্য গত ৫ মার্চ জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে নিজ বাড়িতে আটক করে রাখেন গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা। স্বামীকে উদ্ধারের জন্য স্ত্রী বিথী বেগম থানায় অভিযোগ করেও ব্যর্থ হন। পরদিন পুলিশ হাসান আলীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এলেও তাকে পুনরায় মাসুদ রানার জিম্মায় দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিথি বেগম। টানা এক মাস মাসুদ রানার বাড়িতে আটক অবস্থায় থাকার পর গত শনিবার (১০ এপ্রিল) মাসুদের বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন রোববার (১১ এপ্রিল) দলীয় পদ থেকে মাসুদ রানাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম বাদী হয়ে মাসুদ রানা, রুমেন হক, খলিলুর রহমান বাবুকে আসামি করে সদর থানার দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে মামলায় করেন। ওই মামলায় মাসুদ রানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে এক মাস ধরে আটক ব্যবসায়ী হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহাত গাওহারীকে আহ্বায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খায়ের ও পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফকে সদস্য করে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। গাইবান্ধা জেলা শহরের স্টেশন রোডে আফজাল সুজ নামে হাসান আলীর জুতার দোকান ছিল। তিনি শহরের থানা পাড়ার বাসিন্দা।