# মানা হচ্ছে না সঠিক গাইডলাইন
# নেই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট
# আতঙ্কে সাধারণ রোগীরা
দেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে বেসামাল অবস্থা তৈরি হবে। হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ বেড রয়েছে সে তুলনায় রোগী অনেক বেশি আসছে। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে একপ্রকার হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্যান্য সাধারণ রোগীদের সঙ্গে একই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তদের রাখা হচ্ছে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই হাসপাতালে। এসব ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে মশারির ব্যবহার করার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না সে নির্দেশনা। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে দিন পার করছেন সাধারণ রোগীসহ দায়িত্বরত নার্সরা।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা থেকে বুকে ব্যথা নিয়ে এসে ভর্তি হওয়া হাশেম নামে এক রোগী বলেন, আমার বেডের দুই পাশেই দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এরা কিছুক্ষণ মশারির মধ্যে অবস্থান করলেও বেশিরভাগ সময়ে বাইরে থাকে। এদিকে হাসপাতালে মশার উৎপাতও বেশি। তাই যেকোনো সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই হাসপাতালে দিন পার করছি।
এদিকে আজ থেকে ডেঙ্গু টেস্টের জন্য ৫০ টাকা করে ফি চালু করা হলেও অন্যান্য টেস্ট বেশিরভাগ সময় বাইরে থেকে করার কারণে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের।
গত চারদিন ধরে হাসপাতালটিতে ভর্তি পোস্তগোলা থেকে আসা ইউসুফ (৪৯) নামে এক রোগী। তিনি বলেন, এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি পরীক্ষাও হাসপাতাল থেকে করাতে পারিনি। প্রতিদিন বাইরে দুটো করে পরীক্ষা করতে আমরা অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। যা আমার পক্ষে খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম শর্তই হচ্ছে তাদের মশারির ভেতর রাখতে হবে। কিন্তু সেটি এখানে করা হচ্ছে না- আর এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক। এতে করে হাসপাতালে আসা অন্য রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মিটফোর্ড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৬৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীসহ ১৮৬ ডেঙ্গু রোগী ১১টি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। নতুন রোগীদের মধ্যে ১৪ বছরের নিচে ১৫ শিশুসহ মোট ৪৭ জনকে তিনটি শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ছাড়পত্র দিয়েছে হাসপাতালটি।
সাধারণ রোগীদের থেকে আলাদা ইউনিট করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে কী না? -এ প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী বলেন, এটা আমাদের পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত যে পরিমাণে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাদের জন্য যদি আলাদা ইউনিট করা হয় তাহলে অন্যান্য সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী ব্যতীত আমাদের এখানে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত আটশ থেকে হাজারের মতো রোগী ভর্তি হয়। তাই এ সাধারণ রোগীদের কথা চিন্তা করে আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট করা সম্ভব হবে না। এসব ডেঙ্গু রোগীদের আমরা ৮ টি মেডিসিন ওয়ার্ডসহ তিনটি শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছি। আমাদের এখানে এমনিতেই রোগীর চাপ থাকে তার ওপর ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাধ্য হয়েই ফ্লোরে রোগীদের রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমরা চিকিৎসকদের মধ্যে টিম করে দিয়েছি, যেন ডেঙ্গু রোগীরা সার্বক্ষণিক সেবা পেতে পারে।
সব রোগীদের একসঙ্গে রেখে চিকিৎসা দিলে ডেঙ্গু ছাড়া অন্যান্য সাধারণ রোগীদের ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা আছে কী না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের আমরা মশারির মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছি কিন্তু কিছুক্ষণ মশারির মধ্যে থাকার পর অতিরিক্ত গরমে তারা মশারির মধ্যে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারে না। কোন রকমের মশার উপদ্রব যেন না থাকে সেজন্য আমরা কিছুক্ষণ পরপর স্প্রেসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। তাই সাধারণ রোগীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তারপরও সবাইকে সচেতন থাকবে হবে। একমাত্র সচেতনতা অবলম্বন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা কোনোভাবে সম্ভব নয়।