সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে ১২ দলীয় জোট। নির্দলীয় সরকার গঠন করে দ্বাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
বুধবার (১২ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত ও অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করছি।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১ দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচি হলো, আগামী ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা।
এদিন ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং ১৯ জুলাই বুধবার, ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাজপথে আমরা যুগপৎভাবে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছি। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার ও বিনির্মাণে ২৭ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ থেকে সব দফা এক দফা এক দাবিতে পরিণত হলো। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের এক দফা দাবির দেশ ও জনগণের দাবিতে রূপ নিলো।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশ এক ভয়ানক নৈরাজ্যের করছে। বিনা ভোটের অবৈধ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেড় দশক ধরে জনগণের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। শ্বাসরুদ্ধ জাতির সামনে এই অবিবেচক হিসেবে ক্ষমতালোভী সরকারের পদত্যাগই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়।
তারা বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকেই একমাত্র তথাকথিত সাংবিধানিক উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। যা ১০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আদলে বিজয়ী হওয়ার দুরভিসন্ধি মাত্র।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, কারও ইচ্ছামাফিক গায়ের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দুর্নীতি ও লুটেরাদের স্বর্গরাজ্য বানানোর জন্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। একদল, এক দেশ, এক সরকার- বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের চরিত্রের সাথে কোনোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।