চালক-শ্রমিকদের বিশ্রামাগার ও পার্কিংয়ের সুব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবি পূরণ না হওয়ায় কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা।
সোমবার (১০ জুলাই) সকালে ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয়।
এ কারণে মিয়ানমার থেকে জলপথে বন্দরে স্তূপ হওয়া মালামাল ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সোমবার স্থলবন্দর থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাকও ছেড়ে যায়নি। এর ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার সকাল থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সকালে সাড়ে ৩ হাজার বস্তা আদা নিয়ে একটি ট্রলার মিয়ানমার থেকে জলপথে এসে টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে পৌঁছায়। তবে শ্রমিক না থাকায় আদা ভর্তি ট্রলারটি জেটিঘাটেই নোঙরে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার কথা দেওয়ার পরও ট্রাক চালক-শ্রমিকদের বিশ্রামাগার, পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা না করাসহ অন্যান্য হয়রানির প্রতিবাদে টেকনাফ ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কিছু অসাধু ব্যক্তি স্থলবন্দর থেকে মালবাহী ট্রাক বের করে নিরাপদ স্থানে গিয়ে মাদক বহন করে। এ নিয়েও শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা আজগর মাঝি বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোনো শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করা হয়নি। এর ফলে ধর্মঘট চলছে এবং স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, ‘ট্রাক না পাওয়ায় আমরা (ব্যবসায়ীরা) মালামাল ডেলিভারি খালাস দিতে পারিনি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। তার পরও কেন ধর্মঘট, বুঝতে পারছি না।’
টেকনাফ ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব জাফর আহমেদ বলেন, ‘চালক-শ্রমিকদের বিশ্রামাগার, পার্কিংয়ের সুব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবি দিয়ে এলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই দাবিগুলো পূরণ করছে না। তাই আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা আশা করছি, বন্দর কর্তৃপক্ষ শিগগিরই এসবের সমাধান করবে।’
স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শ্রমিক না আসায় সকাল থেকে স্থলবন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কারা কী কারণে ধর্মঘট ডেকেছে, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কেউ এ বিষয়ে আমাদের অবহিত করেনি।’
এদিকে ধর্মঘটের মূল নেপথ্য ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘স্থলবন্দরে একটি প্রভাবশালী মহল নিজেদের ইচ্ছামতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, ‘স্থলবন্দরে কর্মবিরতির খবর আমার কাছে এসেছে। দ্রুত ট্রাক মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এটি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’