হিমালয়ের দেশ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে দীর্ঘমেয়াদি এক চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এই চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর হবে বলে দেশটির বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রোববার নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের দাম নিয়ে উভয় পক্ষ এখনও কোনও আলোচনা না করলেও চুক্তির মেয়াদ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এরমাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের জন্য— বাংলাদেশে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুল মান ঘিসিং কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ চুক্তিতে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশের কাছে আমাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির বিদ্যুৎ বাণিজ্য পরিচালক প্রবাল অধিকারী বলেন, নেপালের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রথমে পাঁচ বছর মেয়াদি নবায়নযোগ্য চুক্তি করতে চেয়েছিল। বিদ্যুৎ খাতের অনিশ্চয়তার কারণে দীর্ঘমেয়াদির বদলে স্বল্প মেয়াদি চুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল ঢাকা।
তবে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করতে সম্মত হয় বলে জানিয়েছেন কুল মান ঘিসিং। তিনি বলেছেন, দাম ব্যতিত অন্য সবকিছুর বিষয়ে আমরা রাজি হয়েছি। নেপালের বাংলাদেশে বিদ্যুৎ যাবে ভারত হয়ে। যখন ভারত-বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে এ নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদিত হবে; তখনই বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে।
নেপালের বিদ্যু’ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ প্রথমে— বিদ্যুতের দাম বাদে— কারিগরি ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানের আগ্রহ দেখায়। পরবর্তীতে দুই দেশ সেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে— বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ নিয়ে নেপাল আলোচনার পথ খোলা রেখেছে বলে জানিয়েছেন কুল মান ঘিসিং। তিনি বলেছেন, ‘বন্ধুত্বের অংশ হিসাবে আমরা ভালো একটি দাম প্রস্তাবের পরিকল্পনা করছি। কারণ এটি সরকার থেকে সরকারে মধ্যে একটি চুক্তি হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের যে দাম রয়েছে সেটি একটি উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যেতে পারে। তবে দাম এখনও নির্ধারিত হয়নি।’
অপরদিকে ট্রান্সমিশন এবং সার্ভিস ফি— বাংলাদেশ সরাসরি ভারতের বিদ্যুৎ ভায়াপার নিগম লিমিটেডের (এনভিভিএন) কাছে প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন প্রবাল অধিকারী।
তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা এ সংস্থাটিকে যে পরিমাণ ফি দিয়ে থাকে বাংলাদেশকেও সমপরিমাণ অর্থ দিতে হবে। বর্তমানে যে পরিমাণ ফি নির্ধারিত আছে— সেটি অনুযায়ী ট্রান্সমিশনের জন্য বাংলাদেশকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৪০ থেকে ৫০ পয়সা (ভারতীয় রুপি) দিতে হতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের মধ্যকার এ ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে এনভিভিএনকেও রাখা হবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।