কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এবারও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জয়পুরহাটের ব্যবসায়ীরা। দেশের বাজারে সরকার চামড়ার দাম কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এরপরও ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকায় চামড়া কেনাবেচা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
জেলায় এবার এক লাখ ৫০ হাজার ২০০ পশু কোরবানির চাহিদাতে রয়েছে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫ টাকা বেশি নির্ধারণ করেছে। সেই কারণে এবার দেশের বাজারেও গত বছরের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে হবে। এতে ব্যয় বাড়বে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণে লাগবে লবণ। এই লবণের দামও বেড়েছে। গত বছর পরিবহন খরচসহ প্রতি বস্তায় ৭২০ টাকা খরচ হতো। এ বছর ৪৭ কেজির বস্তায় ৯১০ টাকা খরচ হচ্ছে। অর্থাৎ বস্তায় খরচ বেড়েছে ১৯০ টাকা। শ্রমিক মজুরি, পরিবহন খরচসহ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সব কিছুর ব্যয় বেড়েছে।
জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় ১৫০ জনের মতো চামড়া ব্যবসায়ী থাকলেও এখন এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ জনের মতো। গত কয়েক বছরে ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ৩৫ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়ে গেছে। বকেয়া টাকা না পাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করায় নতুন করে ঋণ পাচ্ছেন না তারা। ফলে ব্যবসায়ীরা এবার কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগরের চামড়া ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন বলেন, এবার ৫০০ থেকে ৬০০ পিস চামড়া কেনার প্রস্তুতি আছে। বেশি চামড়া কিনলে লোকসান বেশি। তাই এ ব্যবসা ধরে রাখার জন্য অল্প অল্প করে চামড়া কিনে থাকি। লবণ, পরিবহন খরচ, শ্রমিক মজুরিসহ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সব কিছুর দাম বেড়েছে। আমি ট্যানারি মালিকদের কাছে ১৫ লাখের মতো টাকা পাই। ধার-দেনা করে কোনো রকম চলছি। পাওনা টাকা না পেলে পথে বসার মতো অবস্থা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকার এবার চামড়ার দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এতে আমাদের কোনো লাভ হবে না। কারণ চামড়া শ্রেণি হিসেবে দাম নির্ধারণ করা হয় না। ৬০ হাজার টাকার গরুর চামড়ার দাম কম হবে আবার দেড় লাখ বা দুই লাখ টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম বেশি হবে। সেক্ষেত্রে বড় গরুতে লবণও বেশি লাগে। আর আমরা চামড়া কেনার সময় বিক্রেতারা সরকারের দামে বিক্রি করতে চায়। আবার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রির সময় সরকারের নির্ধারিত দামে তারা কখনোই কেনেন না। তারা সিন্ডিকেট করে চামড়া কেনেন এবং দাম পরিশোধের সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প করে টাকা দেন, যা দিয়ে ব্যবসা সম্ভব নয়। এতে চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন।
ছয় হাজারের বেশি চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ। ইতোমধ্যে তিনি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ২৫০ বস্তা লবণ কিনেছেন। তিনি বলেন, আমি নয় বছর যাবৎ এ ব্যবসা করছি। তার আগে আমার বাবা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিগত কয়েক বছরে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিপুল অংকের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। গত বছর পাঁচ হাজার চামড়া কিনেছিলাম। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এবার কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য টাকা নিতে ট্যানারি মালিকদের কাছে গিয়েছিলাম। টাকা না পেয়ে ঘুরে এসেছি। আবার অনেক ব্যবসায়ী মোট টাকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ টাকা পেয়েছেন। এভাবে ব্যবসা চালানো মুশকিল হয়ে যাবে।