বরিশাল সিটি করপোরেশনের হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী ‘ইন্তেকাল করেছেন কিনা’ এমন বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতেও গিয়েছেন হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী।
তবে নির্বাচন কমিশনের দাবি, সিইসির বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সিইসি কাউকে আঘাত করার জন্য কোনো বক্তব্য দেননি। তবুও যদি কেউ সিইসির বক্তব্যে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আন্তরিকভাবে ইসির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনার পুরো দায় গণমাধ্যমকে দেয়া হয়েছে।
গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমের ওপর ভোট চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভোট শেষে এই হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রার্থীর রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনাকে ‘আপেক্ষিক’ বলে মন্তব্য করেন।
প্রার্থীকে রক্তাক্ত হতে দেখেননি জানিয়ে সিইসি উল্টো হামলা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন। আমরা ওনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। শুনেছি ওনাকে কেউ পেছন থেকে ঘুষি মেরেছে।’
তার এই বক্তব্য নিয়ে কড়া সমালোচনা হয় রাজনৈতিক অঙ্গনের ভেতরে ও বাইরে। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা।
এমন অবস্থার মধ্যে ইসি থেকে এমন বক্তব্য এলো। যেখানে পুরো দায় গণমাধ্যমকে দেয়া হয়েছে।
ইসির পুরো বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো—
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সাধারণ নির্বাচন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আনুমানিক বিকাল ৫টার সময় উপস্থিত সাংবাদিকগণকে ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হতে বর্ণিত প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন। উক্ত বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনের গোচরীভূত হয়েছে।
প্রকৃত বিষয় হলো বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
নির্বাচন কমিশনের উক্ত নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক বর্ণিত বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করত: আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন ২০২৩ তারিখে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। উক্ত প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে (১) মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও (২) মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপযুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে এবং উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে এবং কোনো রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী জনাব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সুনাম ও সম্মানের হানি ঘটে এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ অলীক, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত।
উক্তরূপ অসত্য সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তদুপরি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
সর্বোপরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে যে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ সবোর্চ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত যে কোনো বক্তব্য ও সংবাদ প্রদান ও প্রচার করবেন এবং বর্ণিত অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত মন্তব্য ও সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হতে বিরত থাকবেন।