কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আগামীকাল রোববার থেকে এসব অস্থায়ী হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে পশু বেচাকেনা শুরু হবে। তবে এরই মধ্যে পর্যাপ্ত গরু উঠেছে প্রতিটি হাটে। এখন অপেক্ষা ক্রেতার।
আগামী ২৯ জুন বাংলাদেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের পাঁচ দিন আগে নগরীর হাটগুলোতে পশু বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ আগেই অনেকে গরু এনেছেন। ক্রেতার দেখা না মিললেও হাটে পশু পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় কাটছে ব্যবসায়ী ও খামারিদের।
শুক্রবার (২৩ জুন) সরেজমিন হাজারিবাগের কোরবানি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাটে কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। ছোট-বড় সব সাইজের গরু উঠেছে।
হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ বহু স্থানে হাটের তোরণ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা বার্তা লেখা আছে। হাটের মূল প্রাঙ্গনে বাঁশের খুঁটি বসানোর কাজ প্রায় শেষ। দেওয়া ভিটে বালু। প্রস্তুত হচ্ছে নতুন নতুন অস্থায়ী শেড। শ্রমিকরাও হাট সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশাল ছাউনি। এছাড়া একাধিক হাসিল ঘর তৈরি করা হচ্ছে।
হাটের ইজারা পেয়েছেন ওয়াহিদুর রহমান ওয়াকিব। তিনি ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। পশুর হাটের সার্বিক বিষয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও সরেজমিনে তার পক্ষ হয়ে কথা বলেন একাধিক ব্যক্তি। জানান সর্বিক প্রস্তুতি নিয়ে।
ওয়াহিদুর রহমানের অনুসারী মোজাম্মেল মিয়া জানান, সবমিলিয়ে ৯০ শতাংশ কাজ প্রায় শেষ। ভোগান্তি কমাতে পর্যাপ্ত হাসিল ঘর তৈরি করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীরা নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করছে। গড়ি পার্কিং নিয়ে ঝামেলা এড়াতে তারা কাজ করবে। এছাড়াও পানি, গোসলখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাটে ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন সামসুদ্দিন। আলাপকালে তিনি জানান, কিছু গরু নিয়ে গতকাল এসেছি। আমার আগেও কেউ কেউ এসেছেন। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তি বাড়ায় একটা আগেই এসেছি। পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে আরও গরু আসবে। পশুর দেখভালের জন্য তিনজন লোকও এসেছেন তার সঙ্গে।
গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম কিছুটা চড়া যাবে বলে ধারণা সামসুদ্দিনের। কারণ হিসেবে বলছেন, গরুর সব খাবারে দাম বেড়েছে। ভূষি, খৈল, ভাত রান্নার খুদের দাম বেড়েছে। তাই গরুর দামও বেশি হবে।
বর্তমানে খাবারের বাজারদর জানাতে গিয়ে বলেন, খুদের বস্তা ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা, যা গতবারের চেয়ে বেশ বেড়েছে। খৈল ৭২ কেজির বস্তার দাম ৩২০০-৩৩০০ টাকা নেয়, যা গতবার ২২ থেকে ২৬ শ টাকায় কিনেছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় যেসব স্থানে কোরবানির অস্থায়ী হাট বসবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খোলা জায়গা, খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা এবং পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন এলাকাতেও প্রচুর গরুর সমাগম দেখা গেছে। এখানেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য দেওয়া হয়েছে অনেক সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি। অনেক মানুষ প্রতিদিন হাটে এলেও সবাই গরু দেখে চলে যাচ্ছেন। কেউ কিনছেন না।
সেখানে কথা হয় শরিফুল নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বিভিন্ন গরুর ছবি মোবাইলে ধারণ করছেন। জানতে চাইলে শরিফুল বলেন, গরু দেখতে এসেছি। এখনো কিনিনি। এতো আগে গরু কিনে বাড়িতে রাখা ঝামেলার। এজন্য ঈদের একদিন আগে পশু কিনব বলে চিন্তা করেছি। বাসার পাশে হাট হওয়ায় গরুর কেমন দাম তা দেখার জন্য এসেছি। বিক্রেতাদের আশা, আগামীকাল থেকে পুরোদমে পশু কেনাবেচা শুরু হবে। সেই আশায় অপেক্ষায় আছেন তারা।