বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নিরুত্তাপ ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রাজশাহী ও সিলেট সিটির নির্বাচন। বুধবার (২১ জুন) সকাল আটটায় এই দুই সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হন।
দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের বাইরে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের প্রার্থী রুহুল আমিন টুনু এবং র্যাকেট প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম বাবুর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে রুহুল আমিন বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আর আশরাফুল ইসলাম ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
রাজশাহী সিটিতে ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটারের রাজশাহী সিটিতে মোট ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন। আর নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ভোটার ৬ জন। এছাড়া এবার সিটির ভোটে নতুন ভোটার হয়েছে ৩০ হাজার ১৫৭ জন।
এদিকে, ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দায়িত্বে পালন করেছেন মোট ৩ হাজার ৬১৪ জন কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য পুলিশ-ডিবি, আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে বিজিবি, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এছাড়াও নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়িত্বে ছিলেন ১০ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
এই সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা) ও জাকের পার্টি মনোনীত লতিফ আনোয়ার (গোলাপফুল)। এছাড়াও ২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১১১ জন ও ১০টি সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে লড়ছেন ৪৬ জন প্রার্থী। এরমধ্যে নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন রবিউল ইসলাম।
অন্যদিকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দেন ভোটাররা। সুষ্ঠু ভোট হলে বড় দলের প্রার্থীরা জয়ের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তবে অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর আনন্দ নিকেতন স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর এ অভিযোগ করেন তিনি।
সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হলেন—আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া), স্বতন্ত্র মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), স্বতন্ত্র মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস), স্বতন্ত্র মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নগরে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার ভোট হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে জয়ী হন বদরউদ্দিন কামরান। ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৩ সালে মেয়র পদে জয়ী হন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হন বিএনপি নেতা আরিফুল। তবে এবার দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি আরিফুল হক।
অন্যসব নির্বাচনের মতো রাজশাহী ও সিলেট নির্বাচনেও অনিয়ম এবং গোপন বুথে অযাচিত লোকজনের উপস্থিতি ঘটছে কি না সেদিকে নজর রেখেছে নির্বাচন কমিশন। সকাল থেকে ভোটের শেষ অবধি সিসি ক্যামেরার মনিটরিং সেলে বসে সিইসিসহ অন্য কমিশনার ও কর্মকর্তারা নির্বাচনে চোখ রাখছেন।