দেশে খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুতদার ও কালোবাজারির সঙ্গে জড়িতদের তথ্য দিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যারা হোল্ডিং করে, মজুতদারি ও কালোবাজারি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনারা সাংবাদিকরাও তাদের বের করে দিন। কোথায় কে কী গুজে রাখল, আমরা খুঁজে খুঁজে তাদের বের করব। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে ব্যবস্থা নেব।’
বুধবার (২১ জুন) দুপুরে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে প্রধানমন্ত্রী চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে সরবরাহ থাকার পরও সংকট দেখা দেয়, দাম বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক তো থাকে সুযোগসন্ধানী। তারা সবসময় সুযোগ নিতে চেষ্টা করে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য থাকার পরও যখন দাম বাড়ে, তার মানে কিছু লোক মজুতদারি করে। তারা ইচ্ছে করে মজুতদারি করে দাম বাড়ায়। তখন আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়। যেমন পেঁয়াজ আছে বাজারে, কিন্তু ছাড়ছে না, নিয়ে বসে আছে। মানে পেঁয়াজ পচাবে, ফেলে দেবে, তাও বেশি দামে বেচার জন্য বসে থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন পাঁচ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিলাম, ১০ থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টন আসতে না আসতেই পেঁয়াজের দাম কমে গেল। এ রকম যারা হোল্ডিং করে, মজুতদারি ও কালোবাজারি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কোনো কষ্ট হলে আমরা কোনো কিছু লুকাই না। সেটা সুস্পষ্ট বলি। বলেই সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিই।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার মহামারির পরে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধে, তখন থেকে বলা শুরু করেছি, সবাইকে আহ্বান করেছি যেন এক ইঞ্চি মাটিও খালি না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে খাদ্যমন্দা দেখা দেবে।
ইউক্রেন, রাশিয়া, বেলারুশ এসব রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এসব দেশ সারা বিশ্বের খাদ্যচাহিদা মেটায়। কিন্তু মন্দা শুরু হলে আমরা কানাডা থেকে ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলারে কিনেছি। ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া ৪০০০ হাজার ডলার দিয়েছি। তবে সেসব দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের ফলো করে আমরা ধীরে ধীরে একটা একটা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
মানুষকে খাবার সাহায্য দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নেওয়া শুরু করেছি। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য এক কোটি মানুষকে খাবার সাহায্য দেবো। তা ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যাতে স্বল্পমূল্যে কিনতে পারে, টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে আমরা সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছাবো। পণ্য আমরা বেশি দামে কিনে ভর্তুকি দিচ্ছি। শুধ সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য এসব ব্যবস্থা নিচ্ছি যেন বাজারের ওপর চাপ না পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, এবার ফসলে ভালো উৎপাদন হয়েছে। আগামীতে ভালো হবে। আমাদের আহ্বানের পর এখন কারও কোনো জমি খালি থাকছে না। সবাই জমি চাষ করছে। সবাই উৎপাদন করে চাহিদা মেটাচ্ছে।
এ সময় কাঁচামরিচের দাম বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে বর্ষা আসছে। কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাবে। তখন অনেকেই অনেক কিছু বলবেন। তাই আমি মনে করি, এখনই কাঁচামরিচ কিনে শুকিয়ে রাখুন। যখন দাম বাড়বে তখন সেটা ভিজিয়ে খাবেন। একটু ভিজিয়ে নিলেই আসল কাঁচামরিচের স্বাদ পাওয়া যায়।