‘রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে পশুবাহী ট্রাককে ১২ থেকে ১৩ জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। যারা চাঁদা নেন তারা সবাই বাহিরের লোক। তবে এখানে রাজনৈতিক লোক বেশি। এছাড়াও ঢাকার প্রবেশ মুখ আমিনবাজারে বড় সমস্যা জ্যাকেট বাহিনী। তারা জোর করে হাটে গরুর গাড়ি ঢোকাতে বাধ্য করে। কেউ গাড়ি না ঢোকালে তাদের মারধর শুধু নয়, ৫ থেকে ১০ হাজার টাকাও চাঁদাও দাবি করে তারা।’
বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানী উত্তরার এপিবিএনের হেডকোয়ার্টার্সে হাইওয়ে হেডকোয়ার্টার্স পুলিশ আয়োজিত ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়ককে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে সমন্বয় সভায় পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়।
এ সময় ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হাসানুল কবির বলেন, দৌলদিয়া ঘাটে চাঁদাবাজি হয়। বিষয়টি আগে এক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই সভায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান উপস্থিত ছিলেন। তখন মন্ত্রী ও সচিব আশ্বাস দিয়েছিলেন যে এই চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। কিন্তু তা এখনও বন্ধ হয়নি। তবে আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
তিনি আরও বলেন, আগে পণ্যবাহী ট্রাকে যেভাবে চাঁদাবাজি হতো তার চেয়ে অনেকাংশে কমে গেছে। একটি গাড়িকে রংপুর থেকে আসতে ঢাকায় ঢুকতে দশ থেকে বারো জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। রংপুর থেকে ঢাকায় আসতে শুরুতে মর্ডান মোড়, কারুপন্য মোড়, গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল, টাঙ্গাইল, বাইপাইলসহ ঢাকায় ঢোকার প্রবেশের বিভিন্ন জায়গায় এ চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। এরা সকলে বাহিরের লোক। এখানে সব ধরনের লোকই আছে। আগে যেভাবে চাঁদাবাজি হতো তা এখন হয় না। এ তথ্য গতবারের। এজন্য তিনি আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এরপর এই পরিবহন নেতা বলেন, রাজধানীর প্রবেশমুখে আমিনবাজারে বড় একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটি হচ্ছে জ্যাকেট বাহিনী। তারা লাঠিসোটা নিয়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং জোরপূর্বক হাটে গাড়ি ঢোকানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তারা মারধর করে ও টাকা দাবি করে। এই চিত্র শুধু আমিনবাজারে নয় আব্দুল্লাহপুর এলাকাতেও।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ গরুর গাড়ি মধ্যরাতে মেট্রোসিটি উপর দিয়ে যায়। ফলে মেট্রো সিটিতে এই সমস্যাটা প্রকট। যারা বাধা সৃষ্টি করে তারা স্থানীয় ও হাট কেন্দ্রিক লোকজন। তারা বাধা সৃষ্টি করে গরুর হাটে গরু না নিলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। এটা একটা ভয়াবহ সমস্যা।
এসময় পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাস্তার উপরে যেনো গরুর হাট অনুমোদন না দেওয়া হয়। রাস্তায় কোনো গরুর ট্রাক লোড আনলোড হবে না। এজন্য কোনো খোলা মাঠ বা ফাঁকা জায়গায় গরুর ট্রাক লোড আনলোড করতে হবে। তাহলে ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে যানজট কমানো সম্ভব।
তারা ঈদের আগে পাঁচ দিন থেকে কাভার্ড, লরি, পিকআপভ্যান বন্ধের দাবি জানান। তাদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. শাহাবুদ্দিন খান তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা আপনাদের দাবিটি শুনলাম। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হবে। তবে তারা বন্ধ রাখবেন নাকি করবেন তা তাদের সিদ্ধান্ত। তারা যা সিদ্ধান্ত দেবেন তাই করা হবে বলেও জানান।
এসময় তিনি কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে কোনো গরুর ট্রাক সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আটকানো হবে না বলে জানান। তবে এজন্য ট্রাকের সামনে ও পেছনে গরুর ট্রাক নামের ব্যানার লাগানোর অনুরোধ করেন।
সভায় পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা অনুরোধ জানান, ঈদের আগে যেনো মহাসড়কগুলোতে খানাখন্দ ঠিক করে দেওয়া হয়। তাহলেও যানজট অনেকটা কমে আসবে। এমন সমন্বয় সভার পাশাপাশি ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারের কমিটির নেতাদের নিয়ে বসে আলোচনা করলেও যানজট সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হবে বলেও মনে করেন তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. শাহাবুদ্দিন খান।
এসময় হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মোজাম্মেল হকসহ বিভিন্ন উদাহরণ কর্মকর্তারা ছাড়াও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন— মহাখালীর টার্মিনালের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেন চন্দ্র ঘোষ, গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে মনসুর খালেদ প্রমুখ।