‘স্বপ্ন নিয়ে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকার সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) প্রান্তিক পর্যায়ের ৩০ জন পঙ্গু ব্যক্তিকে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সোমবার (১২ জুন) দুপুরে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলা আগত ৩০ জন পা হারানো ব্যক্তিরা তাদের পায়ের পরিমাপ দেন।
বগুড়া থেকে আসা পা হারানো ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক ছিলাম ১৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই এতে আমার পা কেটে ফেলতে হয়। প্রথম দিকে পরিবারের সবার সাপোর্ট পেলেও পরবর্তীতে আমাকে বোঝা মনে করতে থাকে তারা। আমি গত ১৫ বছরে অসংখ্যবার স্বপ্ন দেখেছি যে আবারো আমি দুই পায়ে হাঁটছি। কিন্তু সকাল হলেই ঘুম ভাঙ্গে স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট নিয়ে। তবে আজ সেই স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে ‘স্বপ্ন নিয়ে’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আমার পাশের গ্রামের এক ছোট ভাই আমার নাম ঠিকানা নিয়েছিলেন। যখন সিআরপি থেকে আমার কাছে পা সংযোজনের জন্য ফোন আসে তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই। কখন সিআরপিতে যাবো এমন মনে হয়। আজ আমার পায়ের মাপ নেওয়া হবে। পরবর্তীতে আমাকে পা সংযোজন করে দেওয়া হবে। আমি এই সংগঠনের সমৃদ্ধি কামনা করি।
ময়মনসিংহ থেকে আসা মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে আমি সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারাই। পা না থাকায় কাওকে জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে পারি নাই। ‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠন যদি আমাকে পা সংযোজন করে দেয় তাহলে আমি এবার বিয়ে করতে চাই এবং জীবনের বাকিটা সময় নিজের মতো করে বাঁচতে চাই।
সিআরপি’র আর্থপেডিক বিভাগের প্রধান সোহানুর নিয়াজ ইমরান বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়ে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রায়ই কৃত্রিম পা সংযোজনের রোগী নিয়ে আসেন। আমরা এখানে অত্যন্ত যত্নসহকারে কৃত্রিম পা সংযোজন করে থাকি। আমাদের এখানে সবাই বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কাজ করছেন। আমরা কৃত্রিম পা সংযোজনের পরে তাদের হাঁটাচলার জন্য ট্রেইনিং দিয়ে থাকি। এখানে কৃত্রিম পা সংযোজন করা অনেকেই এখন দুই পায়ে হাঁটছেন।
এ বিষয়ে ‘স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, আমরা প্রায়ই আমাদের চারপাশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় মানুষ দেখে থাকি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় এই মানুষেরা যেন কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তাদের জীবন-যাপন যেন আরও সহজ ও সুন্দর হয়, সে লক্ষেই ‘স্বপ্ন নিয়ে’ এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে সিআরপি কর্তৃপক্ষসহ যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
উল্লেখ্য যে স্বপ্ন নিয়ে হতে এর আগে ৭২ জন অসহায়কে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেওয়া হয়।