পেটে ব্যাথা নিয়ে ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভবতী হওয়ার খবর পেয়েছেন ১৩ বছরের এক মাদরাসাছাত্রী। আলট্রাসনোগ্রাফি ও প্রস্রাব পরীক্ষার পর এই রিপোর্ট হাতে পেয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পরেন চিকিৎসা নিতে আসা অবিবাহিত ওই শিক্ষার্থী।
ঘটনাটি নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। রোববার বিকেলে ডোমার জেনারেল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১৩ বছরের এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় পেটের ব্যাথার চিকিৎসার জন্য। ওই ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাফি ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে শিশুটি গর্ভবতী বলে রিপোর্ট দেয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর পরিবারের লোকজনের মাথায় বাঁজ ভেঙে পড়ে। অবিবাহিত এতো ছোট একটি মেয়ে কিভাবে গর্ভবর্তী হয়? রাতে তারা অন্য আরও দু’টি ক্লিনিকে গিয়ে একই পরীক্ষা করে জানতে পারেন, তাদের মেয়ে গর্ভবর্তী নয়।
খবরটি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ মাঠ সংলগ্ন ওই ক্লিনিক অবরোধ করে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মেয়েটির বড় বোন বলেন, আমার বোন ওই রিপোর্ট শুনার পর শুধু কাঁন্না করছে। কোনো খাওয়া দাওয়া করছে না। সে অস্বাভাবিক আচরণ করায় আমরা সারারাত তাকে পাহাড়া দিয়েছি। কিন্তু সে মেনে নিতে পারছে না বিষয়টি।
মেয়েটির নানী বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডিএনসি করার জন্য ক্লিনিকের লোকজন আমার কাছে সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। গরিব মানুষ টাকা জোগাড় করতে না পারায় ডিএনসি করতে পারি নাই। এলাকাবাসী অনেকে আবার অন্য ক্লিনিকে পরীক্ষার কথা বললে, আমরা আরো দু’টি ক্লিনিকে পরীক্ষা করে উল্টো রিপোর্ট পাই। পরে জানতে পারি ওই ক্লিনিকে নাকি ডাক্তার থাকে না। নার্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে পরীক্ষা ও অপারেশন করা হয়।
মেয়েটির মামা বলেন, বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে মিমাংসা করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি ওই ক্লিনিকটি বন্ধের দাবি করছি।
ডোমার জেনারেল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর ইসলাম বলেন, ডাক্তার নেহারঞ্জন সাহা আলট্রাসনোগ্রাফি করেছে। আর প্যাথলোজি ট্যাকনোলোজিস্ট লক্ষন রায় প্রসাব পরীক্ষা করে গর্ভবতী হওয়ার রিপোর্ট দিয়েছে। হয়তো তারা ভুল রিপোর্ট দিয়েছে।
ডাক্তার নেহারঞ্জন সাহা বলেন, হয়তো মেশিনের সমস্যার কারণে আলট্রাসনোগ্রাফির ভুল রিপোর্ট এসেছে।
টেকনোলোজিস্ট লক্ষন রায় বলেন, ওই ক্লিনিকে আমি কোনো প্রসাব পরীক্ষা করি নাই। হয়তো ক্লিনিকের কেউ করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী বলেন, এ বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। একটি তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেয়েটির মা ঢাকায় গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। তার বাবা অন্যত্র থাকে। তারা দুই বোন ও এক ভাই দীর্ঘদিন ধরে নানীর বাড়িতে থাকে। মেয়েটি একটি মহিলা মাদরাসায় লেখাপড়া করে।