চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের পারমাণবিক অস্ত্রাগার গত বছর বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যান্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোও তাদের অস্ত্র আধুনিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে।
বার্তাসংস্থা এএফপি’র বরাত দিয়ে সোমবার (১২ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হযেছে, বেশ কয়েকটি দেশের – বিশেষ করে চীনের – পারমাণবিক অস্ত্রাগার গত বছর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে পারমাণবিক শক্তিধর অন্য দেশগুলোও তাদের অস্ত্র আধুনিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে বলে গবেষকরা সোমবার বলেছেন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) পরিচালক ড্যান স্মিথ এএফপিকে বলেছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা হ্রাসের যে ধারাবাহিকতা ছিল আমরা তার শেষের দিকে এগিয়ে চলেছি বা হয়তো ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছি।’
এসআইপিআরআই বলছে, ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র – এই নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মোট পারমাণবিক ওয়ারহেডের পরিমাণ ২০২৩ সালের শুরুতে ১২ হাজার ৫১২ টিতে নেমে এসেছিল। যা ২০২২ সালের শুরুতে ছিল ১২ হাজার ৭১০টি।
এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৭৬টি পারমাণবিক ওয়ারহেড ‘সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য সামরিক মজুদে’ ছিল। যা আগের বছরের তুলনায় ৮৬টি বেশি। ড্যান স্মিথ বলছেন, ‘মজুদ হলো- ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং সেই সংখ্যাগুলো বাড়তে শুরু করেছে।’
পারমাণবিক ওয়ারহেড বৃদ্ধির সিংহভাগই হয়েছে চীনে। এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি তার পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ ৩৫০ থেকে ৪১০টিতে উন্নীত করেছে। একইসঙ্গে ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়াও তাদের ওয়ারহেডের মজুদ বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৭৭ থেকে সামান্য বেড়ে ৪ হাজার ৪৮৯টি হয়েছে। আর বাকি পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো তাদের অস্ত্রাগারের আকার আগের সংখ্যায় বজায় রেখেছে।
অবশ্য বিশ্বের সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্রের প্রায় ৯০ শতাংশ এখনও রয়েছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। স্মিথ বলেন, ‘বড় কথা হলো- আমরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা কমিয়েছি এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেই প্রক্রিয়াটি এখন শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
চীন ‘উপরে উঠছে’
এসআইপিআরআই-এর গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং নিরস্ত্রীকরণের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউক্রেনে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সাথে ‘দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত স্থিতিশীলতা সংলাপ’ স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ (স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশান ট্রিটি) স্থগিতের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর পুতিনের পরমাণু চুক্তি স্থগিতের সেই ঘোষণাকে বিশাল ভুল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মূলত ২০১০ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ‘দ্য নিউ স্টার্ট’ নামের দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্বের দুই শীর্ষ পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত বছর এই চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড, স্থল ও সাবমেরিন-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক বোমাবাহী বিমান মোতায়েনের লাগাম টানা হয়েছিল। মূলত নিউ স্টার্ট চুক্তির অধীনে এই দুই দেশের কেউই এক হাজার ৫৫০টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন করতে পারতো না।
এসআইপিআরআই এক বিবৃতিতে উল্লেখ বলেছে, ‘রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পারমাণবিক শক্তিকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে এটিই ছিল শেষ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি’।
স্মিথ বলছেন, পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ইউক্রেনের যুদ্ধকে সামনে আনা যায় না। কারণ নতুন ওয়ারহেড তৈরি করতে আরও বেশি সময় লাগে এবং এই বৃদ্ধির বেশিরভাগ অংশই এমন দেশগুলোতে হয়েছে যেগুলো এই যুদ্ধের কারণে সরাসরি প্রভাবিত হয়নি।
মূলত চীন তার অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সকল ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। স্মিথ বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হলো- চীন বিশ্ব শক্তি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এটাই আমাদের সময়ের বাস্তবতা।’