রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ভাঙচুরের মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ। তাঁকে আজ সোমবার বেলা ১১টার পরে আদালতে নেওয়া হয়েছে। আদালতের বাইরে কড়া পাহারায় রয়েছে প্রচুর পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন জানিয়েছেন, মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ।
হেফাজতের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের জন্য গতকাল দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার আশপাশের এলাকায় কয়েক শ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মামুনুলকে প্রথমে শ্যামলীতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। বেলা দুইটায় নেওয়া হয় তেজগাঁও থানায়। পরে তাঁকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২০২০ সালে মোহাম্মদপুরে একটি ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা আছে মতিঝিল থানা, পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব এবং জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।
মামুনুল হক ঢাকায় হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অন্যতম। রাজধানীতে হেফাজতের কর্মসূচিতে তিনি দ্রুত জমায়েত করাতে পারেন। উত্তেজক বক্তৃতার জন্য পরিচিত মামুনুল হক সম্প্রতি হেফাজতের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন। তবে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ ঘেরাও হওয়ার পর মামুনুল হকের একাধিক বিয়ের খবর বের হয়। একের পর এক অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হন তিনি।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রিসোর্টের ঘটনার পরদিন মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় খেলাফত মজলিসের নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁকে সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে লাইভ বক্তব্য ও স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এত দিন তিনি মাদ্রাসাতেই অবস্থান করে আসছিলেন।
মামুনুলের বিরুদ্ধে যেসব মামলা
তেজগাঁও পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৭ মার্চ মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া মামলায় মামুনুল হক ৭ নম্বর আসামি। মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানা অজ্ঞাত লেখা আছে। মোহাম্মদপুরের চান মিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা জি এম আলমগীর শাহীন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনি জনতাবদ্ধে এলোপাতাড়ি মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি দেওয়া, ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগ সৃষ্টি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। একটি মুঠোফোন, সাত হাজার টাকা, ২০০ ডলার এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড চুরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, মামলাটির তদন্ত তাঁরা করছিলেন। তদন্তে মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তরের একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, ডিবির মতিঝিল বিভাগে তদন্তাধীন আটটি মামলা, লালবাগ বিভাগে তদন্তাধীন দুটি মামলা এবং তেজগাঁও বিভাগে তদন্তাধীন একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মামুনুল হক। এ ছাড়া মতিঝিল থানায় তদন্তাধীন একটি এবং পল্টন থানায় তদন্তাধীন চারটি মামলায় তাঁর নাম রয়েছে। এই ১৬ মামলার মধ্যে ১৫টি মামলাই হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের পর। এসব মামলার বাদী পুলিশ। ঢাকায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় ৫ এপ্রিল। গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর সংঘর্ষের ঘটনায় এ মামলা করেছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) উপদপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফ উজ জামান। মামুনুল হক এ মামলার ১ নম্বর আসামি।