চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবির বিরুদ্ধে।
বুধবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে সামশাদ রানু আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। মারধর করেছেন।
কী কারণে এমন ঘটনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন ছিল। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। সেই পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে সামশাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্কও ছিল। তার শরীরে রোদ লাগার কারণে আমি বিদ্যালয়ে আসতেই আমাকে জামার কলার ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দিকে নিয়ে যান এবং কিলঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি তার পায়ের জুতা খুলেও মারধর করতে চেয়েছিল। এ সময় অন্য শিক্ষকরা এগিয়ে এলে জুতা দিয়ে মারতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, আকস্মিক এ ঘটনায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছি। পরীক্ষা শেষে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েছি। তিনি তার কার্যালয়ে যেতে বলেছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার কারণে সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হওয়ায় সেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। সেই সময় বিদ্যুৎও ছিল না যে তারা ক্লাসরুমে থাকবে। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার্থীদের রুমে বসানোর পরই তাদেরকে বসানো হত। এজন্য দেরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মহিলা নেত্রী সামশাদ রানু সকাল ৯টার পর বিদ্যালয়ে আসেন। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে শিক্ষার্থীরা কেন বিদ্যালয়ের মাঠে আছে এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের জামার কলার ধরে ধাক্কা দিতে দিতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দিকে নিয়ে যান। জুতা খুলে মারার চেষ্টা করলে আমরা ঠেকায়। এ বিষয়ে পরীক্ষা শেষে সব শিক্ষককে নিয়ে জরুরি আলোচনা সভা ডাকা হলেও প্রধান শিক্ষক বাড়ি চলে যাওয়ায় আলোচনা হয়নি। প্রধান শিক্ষককে নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত সামশাদ রানু বলেন, বিদ্যালয়ের কক্ষ না খোলায় আমার ছেলেসহ প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তীব্র দাবদাহে শিক্ষার্থীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে আমি তার নিকট গিয়ে কক্ষের তালা খোলার কথা বলি। তিনি বলেন, ‘এই দায়িত্ব আমার না, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও কর্মচারী সিদ্দীকের।’ তিনি আমাকে উলটো বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আপনাকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে।’ আমি তার জবাবে বললাম আমি এখানে কোনো নেত্রী হিসেবে না, অভিভাবক হিসেবে এসেছি। এরপরই আমি তার জামার কলার ধরে টেনে নিয়ে কক্ষের তালা খুলিয়েছি। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা কখন শুরু হবে সেটা শিক্ষকদের ব্যাপার। তবে শিক্ষার্থীরা এই গরমের মধ্যে মাঠে কেন থাকবে? শ্রেণিকক্ষ খুলে দিলেই তো তারা সেখানে থাকতে পারত। এই তীব্র গরমে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থও হয়ে যেতে পারত।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, বিষয়টি লোক মারফত জেনেছি। প্রধান শিক্ষকও আমার নিকট মোবাইল করেছিল। আমি তাকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অভিভাবকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নিকট লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করতে পারতেন। শিক্ষকদের শারীরিক লাঞ্ছিত বা মারধর করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘটনা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সামশান রানুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।