‘আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪’-এর যুগ শেষ হচ্ছে। নতুন অর্থবছর থেকেই কার্যকর হতে পারে ‘আয়কর আইন ২০২৩’। আয়কর রিটার্ন আরও সহজে জমা ও কর ফাঁকি বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিধান নতুন এ আইনে সংযোজন করা হয়েছে।
আগামী ৭ জুন আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। নতুন আইনে কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানো, করের পরিধি ও হার বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র।
সূত্র জানায়, পুরো আইনটি লেখা হয়েছে বাংলায়। কোম্পানি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল সহজ করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বর্তমানে কোনো কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সময় ২৯ ধরনের নথি জমা দিতে হয়। নতুন আইনে এটি কমিয়ে ১২ ধরনের নাথির কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে ৩৮ ধরনের সেবা গ্রহণের জন্য ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। নতুন আইনে আরও ছয়টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে এ শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা শহরে জমি বিক্রয়ের ওপর কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদেশি ঋণের সুদের ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন আয়কর আইনে বিদেশ ঘুরতে গেলেই কর অফিসে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে আয়কর রিটার্ন জমার সময় বর্তমানে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্তের কথা বলা আছে। এ তিন শর্তের একটি প্রযোজ্য হলেই সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক। সেগুলো হলো- অর্থবছরে মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা হলে, একটি মোটরগাড়ির মালিক হলে ও সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহসম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হলে।
নতুন আইনে নতুন করে আরও তিনটি শর্ত যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো- কোনো করবর্ষে কোনো করদাতা যদি চিকিৎসা বা হজসহ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে বিদেশগমন ছাড়া অন্য কোনো কারণে ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে যান, তাহলে তাকে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনো করদাতা যদি কোনো এক করবর্ষে দেশের বাইরে সম্পদ কেনেন, তাহলেও তাকে সম্পদের বিবরণী দিতে হবে। তৃতীয়ত, কোনো কোম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক হলেও সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে।
নতুন এ বিধান কার্যকর হলে কেউ বিদেশে ঘুরতে গেলে দেশে ফিরে রিটার্ন দেওয়ার সময় সম্পদের হিসাব কর কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় থাকুক কিংবা না থাকুক, বিদেশ গেলেই ফ্ল্যাট, জমি, আসবাবপত্র, ব্যাংক–ব্যালান্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
এছাড়া দেশের কারও বিদেশে সম্পদ থাকলে, তা যদি কর কর্মকর্তারা প্রমাণসহ জানতে পারেন, তাহলে ওই সম্পদের বিপরীতে জরিমানা আরোপ করার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে।
নতুন আইনে কর কর্মকর্তাদের কর ‘স্বেচ্ছাক্ষমতা’ও কমানো হয়েছে। আগে প্রায় ২০টি ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা যেভাবে যৌক্তিক মনে করতেন, সেভাবে আয়কর নির্ধারণ করতে পারতেন। নতুন আইনে আয়কর নির্ধারণে গাণিতিক পদ্ধতি (ফর্মুলা) দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। কর্মকর্তারা ইচ্ছামতো আয়কর বাড়াতে বা কমাতে পারবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে ও আইএমএফের শর্ত পূরণে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবসাবান্ধব নতুন আইনের খসড়া প্রণয়নের পর সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়। দীর্ঘ পর্যালোচনার পর ১০৮ সুপারিশ করে কমিটি। এসব সুপারিশ আমলে নিয়ে আইনটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে।