মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দা মাধ্যমিক শিক্ষা দাবিতে আগামী ১১ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। সেই সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাসের আগেই জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে আগামী ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনেরও হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও দাবি আদায়ে আগামী ১৩ জুন প্রত্যেক জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ বেশকিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষকদের সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৬ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর দ্বারা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই অ্যাকাডেমিক সময়সূচি ছাড়াও একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। আবার সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোনোপ্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোনো প্রতিকার পাইনি।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, এক ধাপে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হবে- সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই জাতীয়করণের ঘোষণা। এরপর ধাপে ধাপে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করলেও চলবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষায় পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইও) অনুমোদিত ১৪৬টি সুপারিশ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ অথবা জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ করা হয়েছে। তাই ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সারা জাতি আজ চরমভাবে ক্ষুব্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, সিনিয়র সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা প্রমুখ বক্তব্য দেন।