বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট নিয়ে আয়োজন করা আজকের সংবাদ সম্মেলনে বড় রকমের বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। অনুষ্ঠানজুড়ে অব্যবস্থাপনার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
অনুষ্ঠানে অনেক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে পারেননি। আবার মন্ত্রী ও আমলারা যেসব জবাব দিয়েছেন, তাও ভালোমতো শুনতে পারেননি সাংবাদিকরা। এ কারণে সংবাদ সম্মেলন শুরুর পর মাঝে প্রায় ২০ মিনিট বন্ধও ছিল। এছাড়া সাংবাদিকরা মন্ত্রী-আমলাদের যেসব প্রশ্ন করেন, অনেক সময় তাও বুঝতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রীতি অনুযায়ী শুক্রবার বাজেটোত্তর সাংবাদ সম্মেলন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবার শুক্রবার (২ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছিল এর আয়োজন। বেলা তিনটায় শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন, চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ডানে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। আর অর্থমন্ত্রীর বামে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক-বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
অর্থমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বারবার ভেন্যুর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তবে তাতে কোনো কাজ হচ্ছিল না। অর্থমন্ত্রীর পাশে বসা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল পাননি।
এক পর্যায়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আমরা শুনতে পাচ্ছি না। আবার আমরা উত্তর দিলে সাংবাদিক শুনতে পাচ্ছে না।
বেশ কয়েকবার সাংবাদিকদের দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়েছে।
এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী মাইক ছাড়াই সামনে গিয়ে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান। তবে এ প্রচেষ্টাও কাজে দেয়নি। সাংবাদিকদের সবাইকে মঞ্চের সামনে ডেকে নেন অর্থমন্ত্রী। অনেক টেলিভিশন ক্যামেরা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের উপস্থিতির তুলনায় সেখানে দাঁড়ানোর স্থান হয়নি।
অনুষ্ঠান শুরুর পর, অনেক দেরিতে মাইক্রোফোনগুলো কাজ করা শুরু করে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সবচেয়ে ভালো জায়গা খুঁজে নিলাম, এখন কোনো সাউন্ডই পাচ্ছি না। দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের নেওয়া দরকার। আমরা দুঃখিত। আমাদের মাইক্রোফোনে গণ্ডগোল থাকার পরও আপনারা সংবাদ সম্মেলনে সহায়তা করেছেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
সাউন্ড সিস্টেম ভালো না হওয়ায় সাংবাদিকরা প্রশ্নের সঠিক উত্তরও পাননি মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। অনেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এই বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ০ শতাংশ। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। কোন মন্ত্রে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে? বাজারে গেলে নিত্যপণ্যের দামে কেনা যায় না। এই প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর কোনো মন্ত্রীর কাছ থেকে মেলেনি।
জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করার পরদিন একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের রেওয়াজ দীর্ঘ দিনের। বাজেট নিয়ে যেসব আলোচনা-সমালোচনা বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক কিংবা সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে কোনো না কোনোভাবে উত্থাপন করা হয়, সেগুলোর একটি জুতসই জবাব দেওয়ার চেষ্টা থাকে অর্থমন্ত্রীর দিক থেকে। ফলে বাজেটের পরের দিনের এ অনুষ্ঠান বাজেট-বিষয়ক কর্মকাণ্ডের অনেকটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্মেলন কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মূলত সাউন্ড সিস্টেম আনা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেমও রয়েছে। তবে যেহেতু সেটি অনেক আগে ইনস্টল করা, তাই আমরা আয়োজকদের বলি যেন ভালো সাউন্ড সিস্টেম আনা হয়। কিন্তু আজকের প্রোগ্রামে তারা যে সাউন্ড সিস্টেম এনেছে তার ক্যাপাসিটি খুব কম। খুব বেশি ভালো বলা যাবে না। সেজন্যই আসলে এই সমস্যাটি হয়েছে।
তিনি বলেন, পরে আমাদের নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেম দিয়েই প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে।