হয়রানি ও ঘুষের বাণিজ্য কমানোর জন্যই শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল। এমপিওভুক্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালকদের। কিন্তু এই বিকেন্দ্রীকরণই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয়টি এখন শিক্ষা অধিদপ্তরের অনিয়মের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম, বয়স ও নানা বিষয় সংশোধন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতেও বিভিন্ন স্তরে ঘুষ দিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতি স্তরে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গুনতে হয় বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অভিযোগ। এর মধ্যে এমপিওভুক্তির জন্য কমপক্ষে পাঁচ স্তরে ঘুষ দিতে হয় একজন শিক্ষককে। আবার নিয়ম অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকলেও নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়েও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হয় এই অফিস থেকে।
সম্প্রতি ইনডেক্স জালিয়াতি করে রাজধানীর টিএন্ডটি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মহসিন হোসেনের এমপিওভুক্তির ঘটনা ঘটে। বিষয়টির প্রমাণ মেলে বিভিন্ন সরকারি তদন্তেও। এ কারণে এবার ফাঁসছেন দুই কর্মকর্তা। তারা হলেন নিয়োগ কমিটির সঙ্গে জড়িত শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি ও এমপিওভুক্তির সঙ্গে জড়িত ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালকসহ দুজন। এ দুই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে, ভুয়া ইনডেক্স দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হওয়া টিএন্ডটি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মহসিন হোসেনের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগের সুপারিশ করার নিয়োগ কমিটিতে জড়িত শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং পরবর্তী সময়ে এমপিওভুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপপরিচালককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাসকে বান্দরবানে বদলি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এই কর্মকর্তার অনিয়মের কারণে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
এর আগেও শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থাকার সময় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। এর পরও প্রভাব খাটিয়ে এই কর্মকর্তা ঢাকার পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ভাগিয়ে নেন। তথ্য অনুযায়ী, ভুয়া ইনডেক্স দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হন রাজধানীর টিএন্ডটি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মহসিন হোসেন। ভুয়া ইনডেক্স নম্বর দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হলেও এর আগে তার কোনো ইনডেক্স ছিল না। এমপিওভুক্ত হতে অধ্যক্ষের এই জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে সরকারি তদন্তে। এ কারণে ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঐ শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুন মাসে অধ্যাপক ড. মো. মহসীন হোসেন নিয়োগ পান। সেই আলোকে একই বছরের ৩০ জুন অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু তিনি যে এমপিওভুক্তির ইনডেক্স ব্যবহার করেছেন, তা ভুয়া ও জাল। আসাদুল হক নামের আরেক শিক্ষকের ইনডেক্স নম্বর তিনি ব্যবহার করেন। তথ্য গোপন করে অধ্যক্ষ পদে এমপিওর আবেদন করলে আবেদন ফিরিয়ে দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এমপিও না দেওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট মামলাও করেন মহসীন। একসময় এমপিওভুক্ত হন ঐ শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, এই শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এই উপপরিচালক।